Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাজশাহীতে ভয় দেখিয়ে শ্রমিক লীগ নেতার নার্সিং ইনস্টিটিউট দখল

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ এএম

রাজশাহীতে ভয় দেখিয়ে শ্রমিক লীগ নেতার নার্সিং ইনস্টিটিউট দখল

রাজশাহীতে ক্ষমতার দাপটে শ্রমিক লীগের এক নেতা একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট দখল করে নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ নিয়ে মামলা করেছেন নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। 

এ মামলায় শ্রমিক লীগের ওই নেতাসহ দুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তবে কারাগারে থেকেই নার্সিং ইনস্টিটিউটে পাহারা বসিয়েছেন শ্রমিক লীগের ওই নেতা। ফলে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ঢুকতে পারছেন না নার্সিং ইনস্টিটিউটে।

নগরীর তালাইমারি এলাকায় অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটির নাম পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়ার মামলায় গত ২৭ অক্টোবর রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ আলী মুনমুন এবং মাহাবুবুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। 

মাহাবুবুর রহমান আমেনা মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। কৌশলে পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট দখল করতে মাহাবুবুর রহমানই তার ঘনিষ্ঠ শ্রমিক লীগ নেতা শরীফ আলী মুনমুনকে সম্পৃক্ত করেছিলেন বলে অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও মামলার বাদী শরিফুল ইসলামের।

মামলার এজাহারে শরিফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, নগরীর শালবাগান বিমানবন্দর রোডের একটি চারতলা ভবন ভাড়া নিয়ে ২০১৬ সালে তিনি পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। 

পরবর্তীতে আমেনা ম্যাটসের পরিচালক মাহাবুবুর রহমান শরিফুলকে প্রস্তাব দেন যে, তালাইমারিতে তার ম্যাটসের ভবনেই যদি পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট পরিচালনা করা হয় তাহলে খরচ কমবে। এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে শরিফুল ইসলাম সেখানে পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থানান্তর করেন।

মামলায় বলা হয়, পরবর্তীতে নার্সিং ইনস্টিটিউট দখলের ফাঁদ পাতেন মাহাবুবুর। তিনি সঙ্গে নেন শ্রমিক লীগ নেতা শরীফ আলী মুনমুনকে। ২০২১ সালের ১ মার্চ সকালে তারা শরিফুল ইসলামকে ফোন করে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে জলিল বিশ্বাস মার্কেটে ডাকেন। শরিফুল ইসলাম সেখানে গেলে শ্রমিক লীগ নেতা শরীফ আলী মুনমুন তাকে বলেন যে, ‘তুমি বাহিরের লোক, ১০ লাখ টাকা দাও। তা না হলে তুমি প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে না।’ টাকা না দিতে পারলে দুজনের নামে প্রতিষ্ঠান স্ট্যাম্পে লিখে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, চাঁদা কিংবা প্রতিষ্ঠান লিখে দিতে না চাইলে মাহাবুবুর রহমান ও শরীফ আলী মুনমুন ওই মার্কেটে শরিফুল ইসলামকে আটকে রাখেন। পরে সাড়ে তিন লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের এক-তৃতীয়াংশ মালিকানা স্ট্যাম্পে জোর করেই লিখে নেন মাহাবুবুর রহমান। 

পরবর্তীতে শরিফুল ইসলামকেই প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়। শ্রমিক লীগ নেতা শরীফ আলী মুনমুনের প্রভাবের কারণে এতোদিন কিছুই করতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শরিফুল ইসলাম। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে গত ২ সেপ্টেম্বর তিনি মাহাবুবুর রহমান ও শরিফুল ইসলামের নামে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। এতে আটকে রেখে চাঁদা দাবি এবং জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শরিফুল ইসলাম জানান, মামলা করার পর মাহাবুবুর রহমান ও শরীফ আলী মুনমুন আদালতে জামিনের জন্য হাজির হন। আদালত মামলার বাদীর সঙ্গে আপসের শর্তে দুজনকে জামিন দেন। কিন্তু কোনো রকম আপস না করে গত ১৪ অক্টোবর মাহাবুবুর রহমান উল্টো তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট মাহাবুবুর রহমানেরই প্রতিষ্ঠান। গত ৫ আগস্ট শরিফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর করেছেন। এ মামলা করার পর মাহাবুবুর রহমান এবং শরীফ আলী মুনমুন গত ২৭ অক্টোবর শরিফুলের করা মামলায় আদালতে হাজির হন; কিন্তু এক মাসের মধ্যে শরিফুলের সঙ্গে আপস না করায় আদালত দুজনকে কারাগারে পাঠান। সেই থেকে এ দুই আসামি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শ্রমিক লীগ নেতা শরীফ আলী মুনমুন এবং তার সহযোগী মাহাবুবুর রহমান শুধু তার প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখলই করেননি; তার নামে মিথ্যা মামলা করেও হয়রানি করছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও শরীফের ক্ষমতার দাপট কমেনি। তিনি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভাড়াটে লোক বসিয়ে রাখছেন। ভয়ে তিনি এখনও নিজের প্রতিষ্ঠানেই যেতে পারছেন না। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অভিযুক্ত শরীফ আলী মুনমুন ও মাহাবুবুর রহমান কারাগারে থাকায় অভিযোগের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম