বগুড়ায় দুই সাংবাদিকসহ ২১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কলেজছাত্র কেএম নুরুল্লাহ মণ্ডলকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পেশাদার দুই সাংবাদিকসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ২১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ছাত্রের বাবা কেএম সাইফুর রহমান মণ্ডল ৪ নভেম্বর রাতে সদর থানায় এ মামলা করেন। এ নিয়ে জেলায় ২১ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হলো।
সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) একেএম মঈন উদ্দিন জানান, বুধবার বিকাল পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- দৈনিক সংবাদের বগুড়া প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন মিন্টু, দৈনিক কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ ঠাণ্ডা, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়, সভাপতি সজীব সাহা, জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলাল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক অসীম কুমার, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, নাইমুর রাজ্জাক তিতাস, বেনজীর আহম্মেদ, আওয়ামী লীগ নেতা মাশরাফি হিরো, জেলা যুবলীগ সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি, যুগ্ম সম্পাদক সাগর কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত হোসেন ঝুনু, কামরুল হুদা উজ্জ্বল, মাহফুজার রহমান, বগুড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকার, সাবেক কাউন্সিলর ইব্রাহিম হোসেন, তুফান সরকার, সোহাগ সরকার, ওমর সরকার, আশেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী, ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু, ১০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফুর রহমান আরিফ, ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব শেখ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত, নন্দীগ্রাম উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রেজাউল করিম ডাবলু, ১৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন, ১৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমআর ইসলাম রফিক, মোটর শ্রমিক নেতা আবদুল গফুর, যুবলীগ নেতা জাকারিয়া আদিল, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নাছিমুল বারী নাছিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রউফ, গাবতলী উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামিমা আকতার সুমি শাহ প্রমুখ।
বাদী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ছোট নারিচাগাড়ি গ্রামের কেএম সাইফুর রহমান মণ্ডল এজাহারে উল্লেখ করেন, তার ছেলে কেএম নুরুল্লাহ মণ্ডল বগুড়া শহরের জামিলনগরে ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি কাহালু সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শহরের সাতমাথায় সমাবেশে যাচ্ছিলেন নুরুল্লাহ মণ্ডল। কামারগাড়ি এলাকায় পৌঁছলে প্রধান আসামি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয় ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী গঠনের অন্যরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দলবদ্ধ হন। তারা ধারালো ডেগার, ছোরা, লোহার রড, বাঁশের লাঠি, রিভলভার, বন্দুক, ককটেল ও হাতবোমাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হন।
১-৫, ১০, ১৪নং আসামির নেতৃত্বে ও নির্দেশে ৬-৯, ১১, ১২ ও ১৫-২১নং আসামিরা ককটেল ও হাতবোমা নিক্ষেপ করতে থাকেন। ছাত্রজনতা একত্রিত হয়ে আসামিদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এ সময় ৩, ১০ ও ২২নং আসামি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। ১৩নং আসামি তৌহিদ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করলে ভিকটিম কেএম নুরুল্লাহ মণ্ডলের কপালে বিদ্ধ হয়। এরপর আসামিরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলিবর্ষণ করে নুরুল্লাহকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেন।
পরে গুলিবিদ্ধ কেএম নুরুল্লাহকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অপারেশন করে শরীর থেকে গুলি বের করা হয়; কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ও প্রশাসনের তৎপরতার কারণে তাকে শহরের কলোনি এলাকায় হেলথ সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে অপারেশন করে কপালের ভাঙা হাড় বের করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে নুরুল্লাহকে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ন্যায়বিচারের আশায় আসামিদের বিরুদ্ধে এ মামলা করলেন।
এ মামলায় পেশাদার দুজন সাংবাদিককে কেন আসামি করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাদী কেএম সাইফুর রহমান মণ্ডল বলেন, তার ছেলের (ভিকটিম নুরুল্লাহ) শনাক্ত অনুসারে তাদের আসামি করা হয়েছে।
সদর থানার ইন্সপেক্টর একেএম মঈন উদ্দিন জানান, তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।