সোমেশ্বরীর বালুচরে কয়লা খুঁজেই জীবন চলে যাদের
তোবারক হোসেন খোকন, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
গতকাল থেকে শরীরে জ্বর জ্বর লাগছে, গায়ে প্রচণ্ড তাপ। তবুও পেটের ক্ষুধার জ্বালায়, দুই মুঠো ভাতের জন্য কয়লা কুড়াতে যেতে হয় সোমেশ্বরী নদীর বালুচরে। হাতের কব্জি পর্যন্ত ডুবিয়ে দিনভর রোদে পুড়ে ভাসমান কয়লা কুড়াতে নদীর পানি আর বালুচর খোঁড়াখুঁড়িতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়লা শ্রমিকরা।
কয়লা উত্তোলন কাজে শুধু নারীরাই নন, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি কয়েক হাজার মানুষ নদী থেকে নিয়মিত কয়লা তোলেন। এটিও এক ধরনের পেশা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সোমেশ্বরী নদীর বালুচর থেকে কয়লা তুলে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে জীবন চালান তারা।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন নদী থেকে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বুকের এমন দৃশ্য যেন প্রতিদিনের। উপজেলার চৈতাটি, বড়ইকান্দি, কুড়ালিয়া, ফান্দা, ধানশিরা, খড়স, ডাকুমারা, ভবানীপুর, থাউসালপাড়া, আগাড়, রানীখং, তিনআলী, আত্রাখালী গ্রামের প্রায় হাজারো শ্রমিক কয়লা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে গিয়ে কর্মরত কয়লা শ্রমিক রহিমা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, উত্তোলিত কয়লা নদীর চর থেকেই কিনে নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরে সেগুলো দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়। কয়লা বিক্রি করে একেকজন দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। কয়লা ব্যবসায় নিয়ম-নীতি বেধে দিলে শ্রমিকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে জানান শ্রমিকরা।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, নদী থেকে কয়লা তোলার পর পরই পরিষ্কার করতে হয়। পরে প্রতি মন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে দাম আসে। আবার ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকিয়ে বিক্রি করলে তখন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ টাকায় বিক্রি করা যায়।
বড়ইকান্দি গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, ভোরে খাবার খেয়ে নৌকা, জাল, বেলচা কোদাল নিয়ে কয়লা সংগ্রহের উপকরণ নিয়ে নদীতে চলে আসি। গেল বৈশাখ থেকে এলাকায় কোনো কাজ কাম নাই। বালু ঘাটও বন্ধ। আমাদের জীবন জীবিকার একমাত্র ভরসার স্থল এই সোমেশ্বরী নদী। গেলো বন্যায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে গুড়া কয়লা ভেসে আসায় এখন আমরা নদীতে কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি।
দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের দুর্গাপুর উপজেলা। বর্তমানে বালুঘাট, সাদামাটি কোয়ারি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে সীমান্তের ওপার থেকে সোমেশ্বরী নদীতে ভেসে আসা গুড়া কয়লা তুলে সংসার চালাচ্ছেন অত্র এলাকার হাজার হাজার কয়লা শ্রমিক। এতে আর্থিক সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মো. নাভিদ রেজওয়ান কবীর জানান, অত্র উপজেলা আমি নতুন যোগদান করেছি। নদী থেকে কয়লা উত্তোলন নিয়ে মাঝে মধ্যে জটিলতার সৃষ্টিও হচ্ছে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে কথা বলে খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।