নালিতাবাড়ীর ঐতিহ্য বাউত উৎসবে মেতেছেন মৎস্য শিকারিরা
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পিএম
কারো কাঁধে পলো, কারো কাঁধে ঠেলা জাল, ঝাঁকি জাল, খেয়া জাল কিংবা ছিপ জাল। চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী বাউত উৎসবে মেতেছেন মৎস্য শিকারিরা। এখন আর নেই সেই দিগন্ত প্রসারি বিল, তবু ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিলের পরিবর্তে নদীতেই উৎসব উদযাপনে নেমেছেন দুই শতাধিক শৌখিন মৎস্য শিকারি।
ভোগাই নদীর নাকুগাঁও এলাকায় সোম ও মঙ্গলবার দেখা মিলল শৌখিন মৎস্য শিকারিদের আয়োজনে এই বাউত উৎসবের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
শৌখিন মৎস্য শিকারিরা জানালেন, বাবা-দাদাদের দেখেছি এলাকার গোল্লাবিল, কাউয়াকুড়ি বিল, বাইটকামারি বিল, উল্লার বিলসহ বিভিন্ন বড় বড় বিলে বাউত উৎসবে নামতেন। ধরে আনতেন বিশাল আকারের আইর, বোয়াল, শোল, গজার, রুই, কাতল সহ বিভিন্ন জাতের মাছ। এখন সেসব বিল ভরাট হয়ে গেছে। আগের মতো মাছও নেই। তবুও সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমরা প্রতি বছর বিলের বদলে নদীতেই এই বাউত উৎসবের আয়োজন করি।
তারা বলেন, প্রথমে দিন-তারিখ ঠিক করে আমরা আশপাশের কয়েক গ্রামে বাউত উৎসবের জানান দেই। তারপর নির্ধারিত দিনে অটোরিকশা বা ভ্যান নিয়ে যাত্রা করি গন্তব্যে। শরীরে তেল মালিশ করে হৈ-হুল্লোড় করে নেমে পড়ি পানিতে। পলো বিভিন্ন জাল ফেলতে ফেলতে সবাই একযোগে সামনে যেতে থাকি। এর মধ্যে কারও পলোতে বা জালে মাছ ধরা পড়লে, সবাই একসঙ্গে আনন্দ উল্লাস করি। সারাদিনে কেউ হয়তো এক-দুইটা পাছ পান, আবার কেউ হয়তো একটা মাছও পান না। তারপরও কারও আনন্দ উচ্ছ্বাসে কমতি নেই।
উপজেলার হাতিপাগার এলাকার খোকন মিয়া, মনির মিয়া ও হাবিবুর রহমান জানান, বাউত উৎসবে মৎস্য শিকারিদের সঙ্গে আমরাও অংশগ্রহণ করেছিলাম। তবে তেমন বড় মাছ ধরতে পারিনি।
উৎসবে অংশগ্রহণকারী ছায়েদুল হক জানান, প্রতি বছরই এখানে মাছ ধরতে আসি। মাছ পাওয়া বড় কথা না। সবাই মিলে আনন্দ করি। আমি ছোট রুই মাছ পেয়েছি। দিন শেষে আনন্দটুকু থাকবে। আত্মার সম্পর্ক তৈরি হবে একজন আরেকজনের সঙ্গে- এটাই বড় কথা।