ডা. মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। প্রতিদিনই অধ্যক্ষের অপসারণ ও বহাল রাখার দাবিতে পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নার্স ও শিক্ষার্থীরা দুপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার বিঘ্ন ঘটছে। এতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায়নি।
মঙ্গলবারও সদ্য পদায়ন পাওয়া অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানকে অপসারণ দাবিতে ৭ দিনের টানা বিক্ষোভ ও দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। এরপরই তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে ঢাকার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপ-সচিব (পার-১ শাখা) দূর-রে শাহওয়াজ।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে ঢাকার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক (শিশু) ডা. মো. শরিফুল ইসলামকে রংপুর মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক (শিশু) পদে পদায়ন করা হয়েছে। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাদের পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদে ও কর্মস্থলে পদায়ন করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ১০ অক্টোবরের মধ্যে বদলি কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় তাদের তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব (পার-১ শাখা) দূর-রে শাহওয়াজ জানিয়েছেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের ওএসডি অনুমোদন হয়েছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমান। এরপর থেকেই তাকে স্বৈরাচার সরকারের দোসর ও ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষক উল্লেখ করে অব্যাহতির দাবিতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতা। গত ৭ দিন ধরে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবারও রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসক, কর্মচারীরা। ফলে হাসপাতালে সৃষ্টি হয় রোগীদের চরম দুর্ভোগ। কর্মবিরতি শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতা মুখপাত্র রমেকের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম মণ্ডল বুধবার ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি এবং আগামী রোববার থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন।
এরপরই অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
তাকে ওএসডির পর আগে ডাকা সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা সরকারের এমন সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।