আয়কর সার্টিফিকেট নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা
ডামুড্যায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে পেটালেন এসিল্যান্ড!
ডামুড্যা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ পিএম
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় এক কাপড়ের দোকানিকে তুলে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মডেরহাট বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি কাপড়ের দোকান চালিয়ে আসছেন চর ধানকাটি এলাকার সোলাইমান ফরাজী। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও এসিল্যান্ড আবু বকর সিদ্দিক।
এ সময় তিনি সোলাইমান ফরাজীর কাছে ট্রেড লাইসেন্স চাইলে ফরাজী তা দেখান। এরপর তার কাছে আয়কর সার্টিফিকেট চাইলে সেটি তিনি দেখাতে পারেননি। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেন। ক্ষুদ্র দোকানি হওয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে এসিল্যান্ডের সঙ্গে সোলাইমান ফরাজীর কথাকাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আনসার সদস্যকে দিয়ে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখান আটকে রেখে প্রথমে তাকে কান ধরে উঠবস ও পরে আনসার ও তিনি নিজে লাঠি দিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন সোলাইমান।
খবর পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও পৌর জামায়াতের আমির আতিকুর রহমান কবির ঘটনাস্থলে গেলে তাদের অনুরোধে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন এসিল্যান্ড।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা খবর পেয়ে এসিল্যান্ডের অফিসে ছুটে যাই। তিনি আমাদের সামনেই সোলাইমান ফরাজীকে গালাগালি ও একপর্যায়ে লাঠি নিয়ে এসে আনসার সদস্যকে মারতে বলেন। আনসার তাকে পেটানো শুরু করে এবং তিনি (এসিল্যান্ড) নিজেও উঠে এসে পেটানো শুরু করেন। একজন কর্মকর্তা এভাবে নিজ হাতে আইন তুলে নিয়ে মারতে পারেন যা কল্পনাও করিনি। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ডামুড্যা পৌরসভার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান কবিরও অনুরূপ বর্ণনা দেন।
সোলাইমান ফরাজী বলেন, যখন আমাকে জরিমানা করা হয় আমি শুধু বলেছিলাম আমরা গ্রামের দোকানদার তাই আয়কর সার্টিফিকেট রাখি না। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিসকক্ষে নিয়ে কানে ধরে উঠবস করান। পরে তার আনসার সদস্য দিয়ে এবং তিনি নিজেও আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডামুড্যা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বিলিং লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী লাইসেন্স ছাড়াই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন। তাকে আইনগতভাবে কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে তিনজন জামায়াত নেতার অনুরোধে তাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছি। কানে ধরিয়ে উঠবস করা ও মারধরের ঘটনা ঘটেনি।
তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ ঘটনার তদন্তে দ্রুত একটি কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।