মনপুরার তাহসিনের আবিষ্কার
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনবে ডিভাইস
আবদুল্লাহ জুয়েল, মনপুরা (ভোলা)
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পিএম
দেশে প্রতিনিয়ত পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে একের পর এক শিশু। প্রতি বছরই এই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হয়। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে এক অভাবনীয় ডিভাইস আবিষ্কার করল ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার তাহসিন নামে এক ক্ষুদে বিজ্ঞানী।
তিনি ডিভাইসটির নাম দিয়েছেন ‘চাইল্ড সেফটি ডিভাইস'। ডিভাইসটির ওজন মাত্র ৫০ গ্রাম। যে শিশুটি এই ডিভাইস ব্যবহার করবে সেই শিশুটি পানিতে ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকের মোবাইলে কল চলে যাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাসায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বাজতে থাকবে।
এমনকি শিশুটি কোথায় আছে তাও জানা যাবে ওই ডিভাইসটির মাধ্যমে। এতে পুকুরের পানিতে পড়ে গেলেও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে ডিভাইস ব্যবহারকারী শিশু। এভাবে দেশে কমে আসতে পারে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার।
এছাড়াও তাহসিন আবিষ্কার করেছেন লাইফ সেফটি ডিভাইস। এই ডিভাইস ব্যবহারকারীর ওপর কেউ হামলা করলে হামলাকারী ২৫০ থেকে ৩৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক পাবে।
এর পাশাপাশি ক্ষুদে বিজ্ঞানী কৃষকের জন্য আবিষ্কার করেছেন ফার্মার সেফটি মেশিন। এই মেশিনটি ব্যবহার করলে কৃষক রোদ এবং বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবেন। তীব্র গরমে দেবে বাতাস। এছাড়াও কৃষকের জন্য আরেকটি ফার্মার হেলপার মেশিন আবিষ্কার করেছেন। এ মেশিনটি দিয়ে কৃষকরা জমিতে পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে পারবে। এছাড়াও মেশিনটি পাঁচজন কৃষকের কাজ একাই করতে পারে। মেশিনটি পরিবেশবান্ধব।
এছাড়াও এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী একে একে আবিষ্কার করেছেন, ফার্মার অ্যাসিস্ট্যান্ট মেশিন, স্টার্ট থিপ টব সিকিউরিটি, স্মার্ট হর্ন, স্মার্ট ডাস্টবিন, স্মার্ট ওয়াটার টেপ, ডোজ এলার্ম গ্লাস, স্মার্ট বৈদ্যুতিক টেস্টার, স্মার্ট পিশ স্টেবিলাইজার ও অটোমেটিক কার্টেইন অফেনার।
মো. তাহসিন ঢাকা মোটরস ইনস্টিটিউট অব টেকনলোজির ইলেকক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তার বাবা আবদুল হালিম মনপুরা উপজেলার ২নং হাজিরহাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চৌধুরী বাজারসংলগ্ন সোনারচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মনপুরা ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহসিন জানান, তাদের পরিবার সচ্ছল নয়। বাবা-মা খাবারের জন্য বা কোনো কিছু কিনার জন্য যেই টাকা দিতেন তা থেকে জমিয়ে এই মেশিনগুলো আবিষ্কার করেছেন। এই মেশিনগুলো আবিষ্কার করতে তার খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
তাহসিনের বাবা আবদুল হালিম জানান, ছোটবেলা থেকে কিছু না কিছু করার চেষ্টা করত তাহসিন। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করেছি। প্রশাসন বা সরকারের সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পাঠান মো. সাইদুজ্জামান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহসিনকে সহযোগিতা করা হবে। তার উদ্ভাবনী ডিভাইসগুলো প্রশংসনীয়। এছাড়াও ইউএনও তার সাফল্য কামনা করেন।