বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পচারি রোগে মরিচ গাছ মরে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক দফায় লাগাতে হয়েছে মরিচের চারা। মরিচের চারা সংগ্রহ করতেও বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। বৃষ্টির জন্য আগাম মরিচ বাজারজাত করতে পারছেন না তারা।
তবে এ সংকট মোকাবেলায় কৃষকদের ৫০ হাজার কোকোপিটে (নারিকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি, মাটির বিকল্প) মরিচের চারা সরবরাহ করবে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।
বগুড়া সারিয়াকান্দিতে প্রতি বছরের মত এবারো কৃষকরা জমিতে আগাম জাতের হাইব্রিড মরিচের চারা রোপণ করেছেন। রোপণের সময় অনুযায়ী কৃষকেরা সঠিক সময়ে কাঁচামরিচ বাজারজাত করতে পারছেন না।
কারণ হিসেবে কৃষকরা জানিয়েছেন, অসময়ের টানা বৃষ্টিতে তাদের রোপণকৃত মরিচের চারাগাছগুলো ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারেনি ও নষ্ট হয়েছে। ফলে সঠিক সময়ে গাছে মরিচ ধরেনি। তাছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ মরিচ গাছে পচারি রোগ ধরে তা নষ্ট হয়েছে। তাই মরে যাওয়া মরিচ গাছের যায়গায় আবারো নতুন করে বেশ কয়েকবার মরিচ গাছ রোপণ করতে হয়েছে।
উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের নষ্ট হওয়া মরিচ ক্ষেত ভেঙে দিয়ে আবারো নতুন করে গাছ রোপণ করছেন। কেউবা দুই থেকে তিনবারও মরিচ গাছ রোপণ করেছেন। তাছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকদের মরিচ গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ হচ্ছে। এতে মরিচ গাছে গত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। তাছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে বারবার নিড়ানি দেয়ার জন্য শ্রমিক খরচও বেশি হচ্ছে। এতে এ বছরের মরিচ চাষে কৃষকের গত বছরগুলোর চেয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরদিকে বারবার মরিচের চারা লাগানোর ফলে এলাকায় এখন হাইব্রিড জাতের মরিচের চারার সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি কৃষকদের মাঝে ৫০ হাজার উন্নত জাতের কোকোপিটে মরিচের চারা সরবরাহ করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
দুবার মরিচের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার পর উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক খাজা আকন্দ নতুন করে আবারো জমি তৈরি করছেন মরিচ চাষের জন্য। অসময়ের অতিবৃষ্টির কারণে দুবার করে লাগানো মরিচ গাছ তার নষ্ট হয়েছে। ৩০ শতক জমিতে প্রতিবার মরিচ চাষ করতে তার ১৫ হাজার টাকা করে লোকসান গুণতে হয়েছে। পুনরায় শেষবারের মতো তিনি মরিচ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। তবে চারা সংগ্রহ নিয়ে তিনি দু:চিন্তায় আছেন।
একই এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান তার পাঁচ বিঘা জমিতে গত বছর মরিচ চাষ করে দুই লাখ টাকা লাভ পেয়েছেন। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে তার পাঁচ বিঘা জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া সঠিক সময়ে তিনি কাঁচামরিচ বাজারজাত করতে পারছেন না।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্র জানায়, গত বছর এ উপজেলায় ৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে চার হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ উৎপন্ন হয়েছিল। এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ও চলমান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, মরিচ গাছের পচনরোধ করতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির চর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ড. আব্দুল মজিদ জানান, চরের কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করা সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার মরিচ চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। বন্যাপরবর্তী সংকট মোকাবিলায় ফসল নষ্ট হওয়া জমিগুলো দ্রুত চাষের আওতায় আনতে কোকোপিটে উচ্চফলনশীল মরিচ চারা উৎপাদন করছে তারা।