চাঁদার টাকায় দেশে ফিরল ফেঞ্চুগঞ্জের প্রবাসী তুহিনের লাশ
রুমেল আহসান, ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম
পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রবাসীরা; কিন্তু সেই প্রবাসী মারা গেলে যেন তার থাকে না কোনো মূল্য। হয়ে যান অবহেলার পাত্র। অর্থাভাবে অনেকের মরদেহ মর্গে পড়ে থাকে মাসের পর মাস।
তেমনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছত্তিশ গ্রামের তুহিন মিয়ার (২৬) মরদেহ ১৭ দিন পড়ে ছিল হাসপাতাল মর্গে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মরদেহ দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। আমিরাতে তুহিনের ভিসার বৈধতা নেই মর্মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাশ দেশে পাঠাতে সাহায্য প্রার্থনা করেন তার স্বজনরা।
যা দেখে এগিয়ে আসেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছত্তিশ, পিঠাইটিকর ও বাঘমারা গ্রামের বাসিন্দারা। দেশী-প্রবাসীরা চাঁদা উত্তোলন করে টিকিটের টাকা জোগাড় করেন। বৃহস্পতিবার আরব আমিরাতের স্থানীয় সময় রাত ২টায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার সকাল ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তুহিনের মরদেহ দেশে আসবে।
স্থানীয়রা জানান, তুহিনের মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য ওই এলাকার দেশি-প্রবাসীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়াটসআপে গ্রুপ খোলা হয়। গ্রুপের মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সবাই চাঁদা দিয়ে দেন। চাঁদা কালেকশন করা হয় প্রায় ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। সেই টাকা থেকে নিহত তুহিনের মরদেহ দেশে নিয়ে আসা বাবদ বিমান টিকিটে যা খরচ হবে এবং অবশিষ্ট যে টাকা থাকবে তা তুহিনের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।
নিহত তুহিনের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি ও মাতম থামছেই না। ওই তরুণের পরিবারের সদস্য ও আশপাশের প্রতিবেশীরা শোকে মুহ্যমান। তুহিন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছত্তিশ গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়া ও রিনা বেগম দম্পতির বড় সন্তান তিনি। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তুহিন বড়। তুহিনের স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান আছেন।
পরিবার সূত্র জানায়, সংসারে সচ্ছলতা আনতে তিন বছর আগে তুহিন আরব আমিরাতে যান। সেখানে কাজ করে যা পেতেন তা দিয়ে চলত সংসারের যাবতীয় খরচ। গত ১৩ অক্টোবর আরব আমিরাতের স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে পাঁচটায় দুবাইয়ের আল কুজ এলাকায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক তুহিনকে ধাক্কা মারে। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান তুহিন।
তুহিনের বাড়িতে দেখা যায়, ঘরে তার মা-বাবা, ভাই-বোন ও পাশের লোকজন আহাজারি করছেন। স্বজন হারানোর শোকে মুহ্যমান সবাই। স্বজনদের কান্না ও শোকে ভারি হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ।
তুহিনের বাবা আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, আমার এলাকাবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমাদের ছত্তিশ, পিঠাইটিকর ও বাঘমারা গ্রামের দেশী-প্রবাসী সবার কাছে আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ। সবার সহযোগিতার কারণে আমি আমার ছেলের মুখ শেষ বারের মতো দেখতে পারছি। সবার কাছে আমি চিরঋণী।
আরব আমিরাত প্রবাসী আমির আলী বলেন, আমাদের এলাকার দেশ-প্রবাসের সব মানুষের আর্থিক সহায়তায় নিহত তুহিনের লাশ দেশে পাঠাতে পেরেছি। প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ফান্ড দেওয়া হয় বা সরকারিভাবে সব খরচ বহন করে মরদেহ যদি দেশে নেওয়া হয় তখন আর এত ভোগান্তি পোহাতে হবে না। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা সারাজীবন দেশের জন্যই রেমিট্যান্স পাঠান। তাই বৈধ কিংবা অবৈধ সব প্রবাসীর মরদেহ সরকারি খরচে দেশে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।