গারো পাহাড়ে ধান পেকেছে, বাড়ছে বন্যহাতির তাণ্ডব
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদি উপজেলার গারো পাহাড়ের সমতল ভূমিতে এখন মৃদু মন্দ বাতাসে দোল খাচ্ছে আমন ধান। ধান গাছের বুক চিরে বের হওয়া ধানের শীষ কোথাও সবুজ, কোথাও ধারণ করেছে সোনালি রং।
এ সোনালি ধানই কৃষকের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন ভেঙে খান খান করে দিচ্ছে বন্যহাতি। প্রতি রাতেই হাতির দল পাহাড় থেকে নেমে আসছে ধানের খেতে। খেয়ে, পায়ে পিষ্ট করে তছনছ করছে ফসল। বন্যহাতির তাণ্ডবে নিরুপায় এবং সংকটাপন্ন কৃষক রাত জেগে নিজের জমির ফসল রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, আর দুই সপ্তাহের মধ্যেই পাহাড়ি এলাকায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হওয়ার কথা। অনুকূল পরিবেশে বাড়ন্ত ধানের শীষ দেখে কৃষক যখন খুশি, তখনই শুরু হয় বন্যহাতির তাণ্ডব। সাত দিন ধরে প্রায় অর্ধশতাধিক হাতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দলদমা টিলায় অবস্থান করছে।
সন্ধ্যা নামতেই হাতির দল কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাটা এলাকার মারং গোফ ও তালতলা এলাকা দিয়ে ধানের খেতে হামলে পড়ছে। গত এক সপ্তাহে হাতির দল নালিতাবাড়ী উপজেলার বনবিভাগের মধুটিলা ও গোপালপুর রেঞ্জের চৌকিদার টিলা, আন্ধারুপাড়া, খলচন্দা, বিজিবি ক্যাম্পের পাশের পাহাড়ের পাহাড়ি গোফ, পানি হাটা, ফেকামারি এলাকার ১৫-২০ জন কৃষকের প্রায় ২০ একর কাঁচা-পাকা আমন ধানের খেত মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
খলচন্দা গ্রামের কৃষাণী জুপতি কোচনী কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, বন্যহাতি আমার ২৫ কাঠা জমির ধান খেয়ে সর্বনাশ করে দিয়েছে। আমার ক্ষেতের ধান আর কিছুদিন পরেই কাটতে পারতাম। হাতির দল এসে খেতের ধান একদম পিষে দিয়েছে। একই গ্রামের দুর্জয় কোচ, কানাই কোচ জানালেন তাদের এক একর করে জমির ধান হাতির পাল বিনষ্ট করে দিয়েছে।
তারা জানান, আগে মশাল দেখে হাতি ভয় পেত, এখন মশাল দেখলে হাতি আরও তেড়ে আসে।
পানিহাটা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুস সোবহান, নুর মোহাম্মদ, আমালতাসহ অনেকেই জানান, পাহাড়ে হাতির খাবারের অভাব। তাই হাতিগুলো নেমে আসে ফসলের মাঠে। ফসল শেষ হলে তাণ্ডব চালাবে বাড়িঘরে। আগে বন্যহাতির আক্রমণ শুরু হলে হাতি তাড়াতে মশাল জ্বালাতে সরকারিভাবে তেল সরবরাহ করা হতো। এখন কেউ এগিয়ে আসে না। হাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে বন বিভাগ থেকে যে সোলার ফেন্সিং করা হয়েছে, সেগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে রয়েছে। এ হাতির দলই খাদ্যের সন্ধানে চষে বেড়াবে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদি উপজেলার গারো পাহাড়সহ পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট সীমান্তে। তাই গারোপাহাড়জুড়ে বিরাজ করছে হাতি আতঙ্ক। গারো পাহাড়ের বাসিন্দারা হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান।
ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় আট একর ও গোপালপুর বিটে ১০-১২ একর জমির আমন ধান বন্যহাতির তাণ্ডবে বিনষ্ট হওয়ার খবর পেয়েছি। ফসলের ক্ষতি যাতে কমিয়ে আনা যায়- আমরা এলিফেন্ট রেসপন্স টিমের মাধ্যমে এলাকাবাসীর সঙ্গে মাঠে কাজ করছি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের বন বিভাগের নির্ধারিত ফরমে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য আবেদন করার আহবান জানিয়েছি।