রাঙামাটি পর্যটনের দুয়ার খুলছে শুক্রবার
সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম
খুলে দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের জন্য রাঙামাটি ভ্রমণ। এক মাস পর তুলে নেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিরুৎসাহিত করে নির্দেশনা। শনিবার থেকে আগের মতো রাঙামাটি জেলাব্যাপী ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে উল্লেখ করে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান।
এ উপলক্ষে বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি।
এর আগে ১৯-২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনায় পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ সময় রাঙামাটির সাজেকসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ঘুরতে গিয়ে একাধিকবার প্রায় হাজারখানেক পর্যটক আটকা পড়েন। পরে তাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নিজেদের গন্তব্যে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রথমে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর রাঙামাটি এবং পরে সর্বশেষ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ৮-৩১ অক্টোবর তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিতকরণ নির্দেশনা দেয় প্রশাসন।
এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় রাঙামাটি জেলায় এ নির্দেশনা প্রত্যাহারের ঘোষণা করল জেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে দেওয়া প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, সম্প্রতি পাহাড়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ঘটনায় জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ফলে এ পরিস্থিতিতে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রথমে রাঙামাটি এবং পরে ৮-৩১ অক্টোবর তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তাই নিরাপত্তার তেমন কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া পাহাড়ে এবং প্রতিটি পর্যটন এলাকা ও পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে রাঙামাটি জেলাব্যাপী পর্যটকদের ভ্রমণে উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে আগের মতো পর্যটকরা রাঙামাটি জেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন। এতে সার্বিক নিরাপত্তাসহ সবক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক।
এদিকে রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিতকরণ নির্দেশনা প্রত্যাহারে কর্মক্ষেত্রে উৎসাহ ও উদ্দীপনা ফিরছে সরকারি পর্যটন মোটেলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর। এজন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
তবে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করায় রাঙামাটির পর্যটন খাতে অন্তত ৫০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। নির্দেশনা প্রত্যাহারে ভ্রমণে আহবান জানিয়ে পর্যটকদের সেবায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তারা।
দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকশূন্য থাকায় রাঙামাটি সরকারি পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন ৫০-৭০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে বলে উল্লেখ করে রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ বিকাশ চাকমা বলেন, নিরুৎসাহিতকরণ নির্দেশনার ফলে এতদিন রাঙামাটিতে পর্যটকশূন্যতা বিরাজ করছিল। এতে আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতি হয়েছে। আশা করছি, এখন থেকে রাঙামাটিতে পর্যটকদের সমাগম জমবে। এতে অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ডুবে থাকা মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি চালু হয়েছে। আমরা পর্যটকদের সেবার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছি।
বেসরকারি পর্যটন স্পট রাঙামাটি বার্গি লেকের পরিচালক ও রাঙামাটি পর্যটন রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, নিরুৎসাহিতকরণ নির্দেশনা প্রত্যাহারে আমরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন নিরাপত্তার জন্য তেমন কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করি। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তাই পর্যটকদের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে রাঙামাটি ভ্রমণের জন্য আহবান জানান তিনি।