অভিযোগ অস্বীকার শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের
মাদ্রাসা শিক্ষকের পিটুনিতে ১৯ দিন হাসপাতালে শিক্ষার্থী!
যুগান্তর প্রতিবেদন (ঢাকা উত্তর)
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫০ এএম
সাভারে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের পিটুনিতে মোহাম্মদ ঈশান (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী ১৯ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ঈশান ও তার বোন আফসানা আক্তার সাংবাদিকদের কাছে মারধরের বিষয়টি জানান। এর আগে ৬ অক্টোবর সাভারের আমিন বাজার ইউনিয়নের পাঁচগাছিয়া এলাকার জামি’আ মদীনাতুল উলূম ও মদীনাতুল উলূম গোরাবা এতিমখানায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
আহত ঈশানের বোন আফসানা আক্তার বলেন, আমার ভাই ৫ বছর ধরে ওই মাদ্রাসায় পড়া শুনা করে। গত ৪ বছর কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবছর প্রায়ই বিভিন্ন কারণে ঈশানকে মোহাম্মদ হোসাইন নামে এক শিক্ষক মারধর করেন। পড়াশুনার জন্য পিটুনিতে আমরা আগে কখনো কিছু বলি নাই। কিন্তু এই মাসে ঈশানকে শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেইন বেত দিয়ে হাতে ও পায়ে বেধম মারে। এতে আমার ভাইয়ের পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে যায়। হঠাৎ মারধরের কারণে অসুস্থ হওয়ায় তাকে ১৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ইশানের বড় ভাই ইসমাইল বলেন, ৬ অক্টোবর মাদ্রাসার ওই শিক্ষক ইশানকে বেত দিয়ে মারধর করেন। সেই আঘাত প্রাপ্ত স্থানে হঠাৎ ফুলে যায়। পরে আমি ১১ অক্টোবর ইশানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে সেই দিনই বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর টেকনিক্যাল ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১০ দিন চিকিৎসারত থাকার পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঈশানের পায়ে আঘাতের ফলে পায়ের মাংসের কিছু জায়গা পচে গেছে বলে জানান তিনি।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, ২২ অক্টোবর ইশান নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী পায়ে পচন নিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। মূলত পায়ে আঘাতের কারণে রক্তের জমাট থেকে পায়ে পচন ধরেছে বলে জানান তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক মুফতি মোহাম্মদ হোসেইন মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রদের ভয় দেখানোর জন্য মধ্যম গতিতে হালকাভাবে হাতে দুইটি করে প্রহার করা হয়েছিল। সে সময় ঈশান নামে একজন ছাত্র ছিল, তাকেও দুই হাতে দুইটি করে প্রহার করা হয়েছে। কিন্তু তার পায়ে আঘাত করা হয়নি বলে জানান তিনি।
মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব আব্দুর রহিম কাশেমী জানান, ঈশানের পরিবারের অভিযোগর ভিত্তিতে চার সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটিতে মারধরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষক ঈশানের হাতে বেতের আঘাত করেছিল। এরপরে ঈশান মাদ্রাসার দেওয়াল টপকে বাসায় চলে যায়। সে সময় সে দেওয়াল থেকে পড়ে আঘাত পেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আশিক ইকবাল বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।