৫০ বছরে ১০ বার পদ্মাগর্ভে সোলেমানের বাড়ি
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী)
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম
রাজশাহীর বাঘায় ৫০ বছর বয়সে সোলেমান দেওয়ানের ১০ বার বাড়ি পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সোলেমান দেওয়ান পদ্মায় বাড়িঘর ও জমি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।
পদ্মার ভাঙনের কারণে স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে কয়েক মাস খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেন। তার এমন পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে থেকে ১০ কাঠা জমি বছরে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়েছেন। সেখানে দুটি ঘর তুলে কোনোরকম বসবাস করছেন।
সোলেমান দেওয়ানের বৃদ্ধ মা খতেজান বেগম বলেন, আমার স্বামীর ৭০ বিঘা জমি ছিল। এর মধ্যে এক দাগে ৪২ বিঘা জমি ছিল। সমস্ত জমি পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমার ৬ সন্তান। বড় সন্তান সোলেমান দেওয়ানের বয়স এখন ৫০ বছর। এর মধ্যে ১০ বার বাড়ি পদ্মায় চলে গেছে। বর্তমানে কোনো বাড়ি করার মতো জমি নেই। কোথায় যাব, কী খাব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বেশ কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টাঙিয়ে চৌমাদিয়া চরে ছিলাম। পরে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ সন্তান তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে ভাগ করে বাড়ি করা হয়েছে। বড় ছেলের ভাগে ১০ কাঠা পড়েছে।
ছয় সন্তান সোলেমান, ইয়াসিন, ইব্রাহীম, খবির, কবির ও জিয়ারুল। এর মধ্যে সন্ত্রাসীরা ইব্রাহীমকে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে।
সোলেমান দেওয়ান বলেন, বর্তমানে ৬ সদস্যের সংসার চালাই। আমার যা ছিল সব পদ্মার মধ্যে চলে গেছে। আমি বর্তমানে সব হারিয়ে নিম্ব হয়ে পড়েছি। এ যাবত পর্যন্ত কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি।
সোলেমান দেওয়ানের স্ত্রী পারুল বেগম বলেন, বড় ছেলে আরিফুল হক শান্ত (২০) ঢাকায় একটি কলেজে ইতিহাস বিভাগে অনার্সে পড়ছে। ছোট ছেলে পারভেজ দেওয়ানকে (১৬) অর্থের অভাবে লেখাপড়া করানো সম্ভব হয়নি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে বর্তমানে কৃষিকাজ করছে।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবলু মনোয়ার দেওয়ান বলেন, সোলেমান দেওয়ানের মতো অনেক পরিবার পদ্মার ভাঙনে নি:স্ব হয়ে গেছে। আমার জানা মতে কারও ১৫-২০ বার পর্যন্ত পদ্মায় বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। আমি নিজেও ৭ বার বাড়ি স্থানান্তর করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মার চরে যারা বাস করে তারা সাধারণত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে।