হাসপাতালের শব্দ যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ

আমির হোসেন, চরফ্যাশন দক্ষিণ (ভোলা)
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৮ পিএম

ভোলার চরফ্যাশনে হাসপাতাল চত্বর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সড়কে মাইকিংয়ের শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রোগী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। শব্দের যন্ত্রণায় এখন কার কথা কে শোনে?
জানা যায়, শব্দ দূষণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত। এ গুলোর ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি। প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতায় হাসপাতালে রোগী আনতে মাইকিংয়ের শব্দদূষণের কারণে ভর্তিরত রোগীরা অস্বস্তিতে। শব্দ দূষণে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান ও জটিল অপারেশনের রোগীরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সড়কগুলোতে এসব মাইকিং চলছে ঘুরে ঘুরে। বিশেষ করে শুক্রবার ঢাকা বরিশাল-ঢাকা থেকে আগত নামি-দামি ডাক্তারদের দেখাতে সারা দিন অর্ধশতাধিক মাইক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়ক, সরকারি হাসপাতাল, শরিফপাড়া সদর রোডসহ পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করে শব্দ দূষণের ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
আগের দিন থেকে শহরজুড়ে প্রচার প্রচারণা চলতে থাকে। এছাড়াও গ্রামের সাধারণ রোগীদের আকৃষ্ট করতে সপ্তাহজুড়ে মাইকিং চলে অর্ধশতাধিক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর। সাধারণ মানুষের কাছে মাইকের শব্দ দূষণ যন্ত্রণাদায়ক। এই দূষণের সঙ্গে জড়িত প্রাইভেট হাসপাতালের অসাধু মালিক চক্র।
শরিফপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী কামাল হোসেন মিয়াজি বলেন, প্রতিনিয়ত মাইকিং শব্দের কারণে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। শব্দ দূষণের প্রচলিত আইন থাকলেও তারা মানছে না।
চরফ্যাশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাইকের আওয়াজে লেখাপড়ায় অমনোযোগী। তিনি মনে করেন শব্দ দূষণের কারণে কোমলমতি শিশুদের স্নায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, শব্দ দূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, টিন্নিটাস, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্মরণশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে। প্রতিনিয়ত শব্দদূষণে শিশু ও বয়স্করা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব নয়েজ কন্ট্রোলের মতে, শব্দ দূষণের কারণে হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশে থাকলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি তৈরি হতে পারে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হক বলেন, একজন গণমাধ্যমকর্মীর কাছ থেকে জানতে পেয়েছি চরফ্যাশনে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের আকৃষ্ট করতে শহরজুড়ে মাইকিংয়ে রীতিমতো অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শব্দ দূষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক মাসের কারাদণ্ড পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়বার কেউ একই অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। শব্দ দূষণের কারণে ভুক্তভোগী কোনো নাগরিক অভিযোগ করলে প্রচলিত আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।