Logo
Logo
×

সারাদেশ

সমুদ্রে মাছধরা বন্ধ, উপকূলীয় ৩ হাজার জেলের দুর্দিন

Icon

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম

সমুদ্রে মাছধরা বন্ধ, উপকূলীয় ৩ হাজার জেলের দুর্দিন

মীরসরাই উপজেলার সমুদ্র উপকূল নিকটবর্তী সাগরে ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন জেলেরা; এছাড়া এখন চলছে নিষেধাজ্ঞা।

সরকারের তরফ থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় তাতে সংসারের শুধু চাল কেনাও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রয়োজন মিটবে কী করে। জেলেদের এই দুর্দিনে সরকারের সহযোগিতা বাড়ানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মাছধরা বন্ধকালে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। জেলেদের এই দুর্দিন যেন কাটছেই না। 

উপজেলার মায়ানি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের জেলে রণজিৎ জলদাশ বলেন, ছয় সদস্যের সংসার আমার। মৌসুম এলে দাদনে জাল কিনতে হয়। পরে ইলিশ আহরণ করে দাদনের টাকা পরিশোধ করতে হয়; কিন্তু বিগত কয়েক বছর ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় দাদনের টাকা পরিশোধ করতে এনজিও থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এছাড়া বছরে দুইবার মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে।

উপজেলার দক্ষিণ মায়ানি এলাকার বাবুল জলদাশ বলেন, ইলিশ এখন সোনার হরিণ। সাগর ও নদী দূষণ বেড়ে গেছে। তাই ইলিশ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি ভরাট কাজে বড় বড় ড্রেজার ব্যবহৃত হওয়ার কারণেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

মা-ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে নদী ও সাগরে মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৩ অক্টোবর থেকে। ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, মজুদ ও বিপণন বন্ধ থাকবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও টাস্কফোর্স বিভিন্ন সময় অভিযানও পরিচালনা করছে। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে; কিন্তু প্রতি জেলের সংসারে ৫ থেকে ৭ জন, আবার কারো বেশি সদস্যও রয়েছেন। এতে তাদের ১০ দিনও যায় না। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সবজি বা ন্যূনতম আমিষ কী করে কিনবে তারা।

আবার চিকিৎসা বা অন্যান্য প্রয়োজন মিটানো তো অসম্ভব। এমতাবস্থায় মানবেতর দুর্দিনই চলছে ওদের। কেউ কেউ শুয়ে বসে কেউ বা পুরোনো জাল পরিচর্যা বা জোতাড়ালি দেওয়ার কাজে কোনোভাবে দিন কাটছে জেলেদের।    

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মীরসরাইয়ে ২৯টি জেলেপল্লীতে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২ হাজার ৫৫৭ জন। সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। মাছের প্রজনন বাড়াতে ও বেড়ে ওঠা নির্বিঘ্ন করতে বছরের বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার; কিন্তু এরপর ও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না।  কমে গেছে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও। 

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২০-২৩ সাল পর্যন্ত ইলিশ আহরণ কমেছে ২৫ শতাংশ। চলতি বছর ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আহরণ হয়েছে ৫৬ টন। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আরও ৪৪ টন ইলিশ আহরণ হতে পারে।

এ ব্যাপারে মীরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, মীরসরাইয়ে ইলিশ আহরণের চিত্র হতাশাজনক। আগে যেভাবে উপকূলে ইলিশ পাওয়া যেত, এখন সেভাবে পাওয়া যায় না। এর প্রধান কারণ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলো বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে ঘাটগুলো বদলে ফেলায় ইলিশ আহরণ কমেছে। ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে আমরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত করছি। চলতি বছর সব মিলিয়ে ১০০ টন ইলিশ আহরণ হতে পারে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলায় ২০১৬ সালের আগে ২ হাজার ২৬ জন জেলে নিবন্ধিত হন। ২০২১ সালে নিবন্ধিত হন আরও ১০০ জন। পরবর্তী বছরগুলোয় নিবন্ধন পান আরও ৪৩১ জন জেলে। বর্তমানে উপজেলার ২৯টি জেলেপল্লিতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২ হাজার ৫৫৭ জন। নিবন্ধন ছাড়া আরও ৫ শতাধিক জেলে রয়েছেন বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম