ঘূর্ণিঝড় দানা
বাগেরহাটে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া, উপকূলজুড়ে আতঙ্ক
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৯ পিএম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাগেরহাট জেলাজুড়ে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। দুপুরেও সূর্যের দেখা মেলেনি উপকূলীয় এই জেলায়। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। বসতবাড়ি, গবাদি পশু ও মৎস্য ঘের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
রাতে আঘাত হানার খবরে উপকূলবাসীর কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। জলচ্ছাস হলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জীবনেরও ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
রামপাল উপজেলার রোমজাইপুর গ্রামের মো. তুহিন বলেন, আমাদের এলাকায় কোন বেড়িবাঁধ নেই। বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারে বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করে। ঝড়ে কি হবে জানি না, আশ্রয় কেন্দ্রও অনেক দূরে।
পেরিখালী ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য হেনা বেগম বলেন, রামপালে ও মোংলা উপজেলার বেশিরভাগ অংশ বেরিবাধের বাইরে। যেকোন ঝড়-জলচ্ছাসে এই এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দানার খবরে সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরাও মানুষকে সচেতন করছি। যাতে মানুষের জান মালের ক্ষতি কম হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বেরুনী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও ব্লক প্রস্তুত আছে। বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধগুলো আমরা পর্যবেক্ষন করছি। ৩৫/১ পোল্ডারের বাঁধে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী অংশে ৫০০ মিটারের মত ঝূকিপূর্ণ রয়েছে। প্রয়োজনে জরুরী মেরামত করা হবে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালের বেশকিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই। তাদেরও সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টিতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। রহিম নামের এক রিকশা চালক বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি রাস্তায় তেমন লোক নাই। মাত্র ৭০ টাকা আয় করেছি। রাতে নাকি বড় ঝড় হবে। কি খেয়ে বাঁচব তা জানি না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। উপকূলের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
এছাড়া শিশুখাদ্য জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা নগদ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। আপদকালীন মানুষদের সহযোগিতার জন্য ৩ হাজার৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে। ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জরুরি সভা করেছি। জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা ও দূর্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও গর্ববতী নারীদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। গবাদি পশু ও মাছের ঘেরগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। সবাইকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নির্দেষ মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
ঘূর্ণিঝড় দানার খবরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিদেশী জাহাজ ও সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষার জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এখন পর্যন্ত বন্দরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড ও গণসংযোগ বিভাগের উপ-সচিব মো. মাকরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার খবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জাহাজগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরে এখন নিজস্ব ১ নম্বর এলার্ট চলছে, তিন পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।