বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
চোখের আলো হারিয়ে গেছে গুলিবিদ্ধ বাবুর
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪০ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত রাজপথ কাঁপানো স্লোগান দিতো আব্দুল্লাহ বাবু। ১৯ জুলাই জুমার নামাজ শেষে যাত্রাবড়ি গোলাপবাগ এলাকায় ছুটেন তিনি। তখন বজ্রকণ্ঠে স্লোগান আর স্লোগান মুখরিত পুরো এলাকা।
মিছিলের সম্মুখভাগে এগিয়ে চলছিল বাবু। হঠাৎ একটি বাসার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসেই পুলিশ সরাসরি রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। এ সময় চোখ-মুখ ও নাকে গুলিবিদ্ধ হয় বাবু। বাবু গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে। থাকেন এখন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া এলাকায়।
৬৫ বছর বয়সি বাবা ৪-৫ বছর যাবত ড্রাইভিং ছেড়ে দিয়ে ছিলেন। আর্থিক অনটনের সংসারে এ পেশায় যোগ দেন বাবু। তার আয়ে এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার আর বাবা আব্দুল বারেক ও মা সালমা বেগমকে আগলে রাখতেন। ২০২৩ সালে রাজনৈতিক মামলায় তার বাবাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।
বাবা আব্দুল বারেক ৩৯নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবার পেশায় প্রবেশ করে ছেলে বাবুও বাবার সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও সক্রিয় ছিলেন বাবু।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বাবু ছিল মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলিতে ইতোমধ্যে বাবুর বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এ চোখে আর কখনও দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে না। সে সময় ডান চোখেও গুলির আঘাত লাগে। সেই চোখটিও এখন ঝাপসা হয়ে আসছে। তাকে চিকিৎসার জন্য জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা ও আরেকটি সংগঠন ১ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
তবে চোখের চিকিৎসা আরও চালিয়ে যেতে হবে। তাই সন্তানের সুচিকিৎসা ও তার সংসারের হাল ধরতে আবারও গাড়ির স্ট্রায়ারিং ধরেছেন তার বাবা আব্দুল বারেক।
ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ বাবু জানায়, আমরা একটি স্বপ্ন নিয়ে স্লোগান ধরেছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণে একটি-দুটি চোখ কেন, জীবন চলে গেলেও ফিরে আসতাম না। ঝাপসা চোখেই স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন দেখেছি। এ আমার মহানন্দ।