ইউএনওর কাঁধে পদের ভার, গলদঘর্ম অবস্থা
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০২ পিএম
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব দপ্তরের দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও।
উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল, আলিম, ফাজিল মাদ্রাসা ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার বিলে স্বাক্ষর করতে হয় ইউএনওকে। দেখতে হয় তাদের ফাইলপত্রও। কোনো প্রতিষ্ঠানের সমস্যা থাকলে সেখানে বাড়তি সময় দিতে হয়।
এছাড়া উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে তাকে দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি না থাকায় দায়িত্ব সামলাতে গলদঘর্ম অবস্থা ইউএনওর।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের স্থায়ী কমিটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। তবে তারা না থাকায় সব কমিটির দায়িত্ব এখন ইউএনওর কাঁধে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পদাধিকার বলে সব সভাপতি পদের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ইউএনও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ইউএনওর ওপর চাপ কমাতে কিছু কাজ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া যেতে পারে। কারণ ইউএনওর পদটি উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাকে চাপমুক্ত রাখলে ভালো সেবা পাওয়া যাবে। এসব বাস্তবায়নে সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা প্রয়োজন।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষা, কৃষি উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ভাতা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, বয়স্ক-বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, মাতৃত্ব ভাতা, চোরাচালান প্রতিরোধ, এনজিও সমন্বয়, টেন্ডার, টিআর-কাবিটা, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউএনও। এখন সমন্বয় সভাও পরিচালনা করতে হচ্ছে।
শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, এখন রাজনৈতিক সরকার না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ থেকে দলীয় লোক বাতিল করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও।
উপজেলা পর্যায়ে একজন ইউএনও স্বাভাবিকভাবে ৪০ থেকে ৪৫টি কমিটির সভাপতি থাকেন। এর সঙ্গে এখন আরও অন্তত দেড়শ পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে আছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও তার কাঁধে।
উপজেলার এক কর্মকর্তা বলেন, দায়িত্ব পালনে কষ্টকর হলেও ওপরের নির্দেশ মেনে নিতেই হবে। গাফিলতির সুযোগ নেই। চাপের মধ্যেও নাগরিক সেবা ঠিক রেখে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলার সরকারি দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এতগুলো পদের দায়িত্বে থাকার কারণে ইউএনওর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। কাজের চাপে এবং সময় স্বল্পতায় অধিকাংশ কমিটির সভায় হাজির হতে পারেন না তিনি। বাধ্য হয়ে এসব কমিটির সভার রেজুলেশনে বা প্রয়োজনীয় কাগজে পরে স্বাক্ষর করেন।
ইউএনও কার্যালয়ের একজন অফিস সহকারীর ভাষ্য- তারা বাড়তি কাজের চাপে আছেন। অনেক সময় সন্ধ্যা, এমনকি রাত অবধি কাজ করতে হয়। ইউএনও অতিরিক্ত সময় নিয়ে অফিস করছেন। তিনি থাকলে কর্মচারী হয়ে তাদেরও আগে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য বাড়তি ভাতা না থাকলেও কাজ করতে হচ্ছে। কষ্ট হলেও দিনের কাজ দিনে সম্পন্ন করার চেষ্টা থাকে সবার।
উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা হারুন অর রশিদ বলেন, তাদের কাছে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসতেন বিভিন্ন ধরনের সেবা নেওয়ার জন্য। তবে দায়িত্বে না থাকায় সব কাজের চাপ পড়েছে ইউএনওর ওপর। জনপ্রতিনিধি থাকলে সব দপ্তরের কাজে গতি আসে। মানুষ দ্রুত সেবা পায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের চাকুরির ধরনই হলো প্রচন্ড চাপ সামলে জনসেবা অব্যাহত রাখা। দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে প্রশাসন ক্যাডার সরকার ও জনগণের পাশে থেকে দক্ষতা ও সফলতার সাথে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এ পরিবর্তনের সময়েও সরকার প্রদত্ত দায়িত্ব সারা দেশের ইউএনওরা পালন করে যাচ্ছে। সরকার যেভাবে যখন যে দায়িত্ব পালন করবেন আমরাও চেষ্টা করব সে দায়িত্ব সরকারের নির্দেশনা ও আইনকানুন মতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। সবসময় প্রচেষ্টা থাকে জনসেবা যাতে কিছুতেই বিঘ্নিত না হয়। এখন পর্যন্ত কেন্দুয়া উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক।