মাদারীপুরে পুলিশের গুলিতে আহত তামিমের হাত অকেজো হওয়ার পথে

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম

স্বজনদের সঙ্গে তামিম
মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত কলেজ শিক্ষার্থী তামিম হোসাইনের বাম হাত সারা জীবনের জন্য অকেজো হওয়ার পথে। এক সময় পাড়ার মাঠে ব্যাট-বল হাতে যে ছুঁটে বেড়াতেন, তিনি এখন বিছানা আর বাড়ির আঙ্গিনায় ছটফট করে দিন পার করছেন। ফলে পড়াশোনা শেষ করে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেছে তার। বাম হাতের রগ আর হাড়ের ভিতরে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে গুলি। তার উন্নত চিকিৎসা না হলে সারা জীবনের জন্য বাম হাত অকেজো হয়ে যাবে।
আহত তামিম হোসাইন (২৩) মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাহেরান্দী গ্রামের আনোয়ার মাতুব্বরের ছেলে। তাকে প্রশাসন থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আহত পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই সকাল ১১টা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল মাদারীপুর পৌর শহরের লেকপাড়। একদিকে শিক্ষার্থী, অন্যদিকে তৎকালীন সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশবাহিনী। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়লে পুলিশ ব্যাপক গুলি ছুড়তে থাকে। এতে শতাধিক শিক্ষর্থী আহত হয়। এদের মধ্যে মাদারীপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ডিগ্রী শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হোসাইনের শরীরে একাধিক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়।
তাকে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরের দিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার তিন দিন পরে ঢাকার সিএমএইচে পাঠানো হয়। সেখানে কিছু দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। তবে বাম হাতের তালুর রগ আর একটি আঙ্গুলের গুলি বের করা যায়নি। ফলে বাড়িতে সঠিক চিকিৎসা না করায় বাম হাতটি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। টাকার অভাবে তার উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছে না তামিমের পরিবার।
আহত তামিমের মা মোসা. নাজমা বেগম বলেন, প্রাথমিকভাবে মাদারীপুর সদরে চিকিৎসা করিয়ে বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসা চলছে। এখনও তার বাম হাতের রগে গুলি থাকায় এক হাত অকেজো হওয়ার পথে। এরই মধ্যে কয়েকটি সংগঠন থেকে কিছু সহযোগিতা করেছে, সেটুকু পর্যাপ্ত নয়। শুনেছি, সরকারিভাবে চিকিৎসা করানো হবে, কিন্তু সেটার কোনো প্রতিফলন দেখছি না। আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা নেই, তাই সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাহেরান্দী গ্রামের আনোয়ার মাতুব্বর ঢাকায় বেরসকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। তার বাবার পক্ষেও ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব না। বর্তমানে তামিমের চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজন ১০ লাখের বেশি টাকা। তাই এ তরুণের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো দাবি আহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর।
উদীয়মান তরুণ তামিমের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যারা গুলির সামনে নিজেদের বুঁক উঁচিয়ে দিয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্যে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। না হলে অধরাই থেকে যাবে আমাদের স্বপ্ন।
তবে জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কার সাহার দাবি, তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করা হবে। যদি কেউ আইনি ব্যবস্থা নিতে চায়, সেক্ষেত্রও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোনো পুলিশ সরাসরি দায়ী হলে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুরে আন্দোলনে তিনটি সংঘর্ষের ঘটনায় ১০১ জন ছাত্র-জনতা আহত ও ৩ জন নিহত হয়। এসব ঘটনায় জেলায় তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের দাবি জানান আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।