শাপলা বিক্রি করে চলে শতাধিক সংসার
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
শাপলা ফুল দেখতে যেমন সুন্দর, তরকারি হিসেবে খেতেও সুস্বাদু। দাম কম হওয়ায় নিম্নবিত্তদের কাছে এর চাহিদা অনেক। সুস্বাদু হওয়ায় ধনীরাও খায়। গ্রাম-বাংলায় খাল কিংবা ডোবায় বর্ষা মৌসুমে দেখা মেলে এই শাপলা ফুলের। আর এই শাপলা বিক্রি করে চলে শতাধিক সংসার।
শাপলা সংগ্রহকারী আগৈলঝাড়া উপজেলার চেংগুটিয়া গ্রামের মুনিয়া আক্তার জানান, প্রতিদিন সকালে ক্ষেত থেকে শাপলা উঠিয়ে বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করে আসছি। শাপলায় তাদের পরিবারের জীবন চলে। আগে বাজারে শাপলা বিক্রি করতাম। এখন গাড়ি এসে শাপলা নিয়ে যায়।
এছাড়াও স্থানীয় অনেকেই শাপলা বিক্রির টাকায় সংসার চালাচ্ছেন, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পড়াচ্ছেন। বর্ষা মৌসুমে আগে গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্তরা শাপলা তুলে তা দিয়ে ভাজি ও ভর্তা করে খেত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখন শহরের বাজারেও সহজলভ্য শাপলা। সুস্বাদু হওয়ায় শহরেও তাই চাহিদা বাড়ছে। খাবার হিসেবে যেমনই হোক বর্ষা মৌসুমে আগৈলঝাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার কয়েকশ পরিবারের জীবিকার প্রধান মাধ্যম এই শাপলা। বিল থেকে শাপলা তুলে এসব পরিবার সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করে। বছরে দুই থেকে তিন মাস শাপলা বিক্রি করেই চলে এসব পরিবার।
উপজেলার বাশাইল, চেঙ্গগুটিয়া এলাকার দিনমজুররা সকালে ও বিকালে খাল-বিল ও জমিতে জন্মানো শাপলা তুলে নৌকায় করে নিয়ে আসে। এরপর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন। বিকালের দিকে পাইকাররা গিয়ে সেগুলো কিনে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে যায়।
শাপলা ফুল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। বহু বছর ধরে বরিশাল জেলার প্রতিটি উপজেলায় এ পেশাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন অনেকেই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সুমন দাস জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ আঁটি শাপলা সংগ্রহ করি। এবার বর্ষাকালে সময়মতো বৃষ্টি কম হওয়ায় শাপলা উৎপাদন কম হয়েছে। যত পানি বেশি হবে শাপলাও বেশি হবে।
তিনি আরও জানান, পাইকাররা তাদের কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে এক জায়গায় করেন। রাতে রওনা দিয়ে সকালে ঢাকার পাইকারি বাজারে এগুলো বিক্রি করেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ভোর ৫টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বিলে শাপলা তোলা হয়। প্রায় ৬০-৭০টি শাপলায় করা হয় একটি আঁটি। এসব আঁটি পাইকাররা কেনেন ৫০-৬০ টাকায়। ২০টি শাপলা দিয়েও আঁটি বিক্রি করা হয়। এগুলো মূলত স্থানীয় লোকজন ১০ টাকায় ক্রয় করেন। দৈনিক একজন কমপক্ষে ৫০ আঁটি শাপলা তুলতে পারেন। প্রতিদিন শাপলা সংগ্রহ করে ৮-১০টি পিকআপভ্যান রাজধানীসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় জানান, বর্ষায় প্রাকৃতিকভাবেই খেতে শাপলা ফুটে। যেহেতু বর্ষায় জেলার অধিকাংশ জমিতেই পানি থাকে, এজন্য প্রচুর শাপলা হয়। বহু কৃষক এসব শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন। যদি ঠিকমতো সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়, তবে এটিও আয়ের ভালো উৎস হতে পারে।