একের পর এক খুন-হামলা, আতঙ্কে দৌলতদিয়া নিষিদ্ধ পল্লির বাসিন্দারা
শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দেশের সর্ববৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে দুইটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া হামলা ও ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। এতে ওই পল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সরেজমিন জানা গেছে, মাদকসহ অপরাধের অন্যতম সূতিকাগার দৌলতদিয়া যৌনপল্লি। এখানে মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজিসহ পল্লির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা ধরনের ঘটনা-দুর্ঘটনা সারা বছরই ঘটে থাকে। গত ৫ আগস্ট দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পল্লির অস্থিরতা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকা অনেক প্রভাবশালী বাড়িওয়ালা-বাড়িওয়ালীর ঘরবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ঘরে তালা লাগিয়ে বের করে দেওয়া হয় অনেককে। প্রাণভয়ে কেউ কেউ পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য নানাভাবে ম্যানেজ করে অধিকাংশই পল্লিতে ফিরে আসে। তবে মাদক বাণিজ্য, জুয়া খেলার আসর চালানো, চাঁদাবাজি, মেয়েদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়াসহ পল্লির ওপর আধিপত্য বিস্তারের খেলা চলছেই।
এ নিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর সুমি নামের এক যৌনকর্মীকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর ফারুক সরদার নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। এ ঘটনার পর যৌনপল্লিতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পল্লির নার্গিস বাড়িওয়ালীর বাড়িতে ডাকাতিকালে ধারালো অস্ত্রসহ তিন ডাকাতকে থানা পুলিশ সাহসিকতার সঙ্গে গ্রেফতার করে।
নাম প্রকাশ না করে পল্লির কয়েকটি মেয়ে বলেন, তাদের মতো সাধারণ যৌনকর্মীর সঙ্গে জোরপূর্বক মেলামেশা এবং চাঁদা আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী পরিচয়ধারী কিছু যুবক। এদের কারণে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এদিকে আতঙ্কের কারণে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে আগের মতো খুব একটা খদ্দের আসছে না। ফলে অনেক মেয়ের দিন কাটছে খুবই কষ্টের মধ্যে।
যৌনকর্মী ফারজানা জানান, আমাদের যৌনপল্লিতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটার কারণে বাহির থেকে এখানে কোনো খদ্দের আসছে না। খদ্দের না আসাতে প্রতিদিনই মেয়েরা বাড়িওয়ালাদের কাছে ঘর ভাড়াসহ দেনা হচ্ছে। রাত হলেই পল্লিতে আতঙ্ক নেমে আসে। সব মিলিয়ে আমরা ভালো নেই।
যৌনকর্মীদের নেত্রী পারভিন আক্তার জানান, মেয়েদের দোষে মেয়েরা মারা যাচ্ছে। যৌনপল্লিতে স্থানীয় মাদক কারবারিরা প্রতি ঘরে ঘরে মাদক পৌঁছায় দেয়। যৌনকর্মীরা মাদক সেবনের কারণে ঘর ভাড়া ও দোকানদারদের বাকি টাকা পরিশোধ করাসহ মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিচ্ছে। এখানে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের ছেলেপেলেরা এসে জোর করে মেয়েদের ঘরে যায়। কোনো মেয়ে তাতে আপত্তি জানালে মারধর করে। কিছুদিন আগে মিতা নামে একটি মেয়েকে হাত-পা জানালার সঙ্গে বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, পল্লির মাদক সিন্ডিকেটকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। চলতি মাসে এ পর্যন্ত ১০টা মাদক মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে। দিনে তেমন সমস্যা না থাকলেও রাতে পল্লির মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে যৌনপল্লির ৫টি গেটের মধ্যে চারটি গেট সন্ধ্যার পর হতে বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র মেইন গেটটি খোলা থাকবে।
তিনি জানান, এ নিয়ে দুই দিন আগেও পল্লির বাসিন্দাদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় পল্লির প্রতিটা বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে তা পুলিশ বক্সের নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।