মানসিক প্রতিবন্ধীর সঙ্গে এ কেমন নিষ্ঠুর আচরণ!
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম
রুহেনা বেগম। ২০১২ সাল থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী। চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্রও আছে। কিন্তু কেউ সেটা তাত্ক্ষণিকভাবে মেনে নেয়নি। সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তার আগে স্থানীয় লোকজন রুহেনার ওপর চালিয়েছে অমানবিক নির্যাতন। অপবাদ দেওয়া হয় মূর্তি ভাঙচুরের চষ্টো ও হামলার। ৮ দিন থেকে সেই নির্যাতন আর অপবাদের ক্ষত নিয়ে মেৌলভীবাজার জেলহাজতের প্রকোস্টে কাটছে রুহেনার অনিশ্চিত দিনকাল। কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে এএসআই মো. নুরু মিয়াকে বুধবার পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।
দুর্গাপূজার নবমীর রাত অর্থাত্ ১২ অক্টোবর রাতে কামারকান্দি গ্রামের লেবু মিয়া ও বাচ্চু মিয়ার ভাগনি রুহেনা স্বামী আল আমীনের সঙ্গে ঘরে ছিলেন। কিন্তু রুহেনা কখন উঠে ঘরের বাইরে গেছে টেরও পাননি স্বামী। অনেক খঁোজাখঁুজির পর পরিবারের লোকজন রাতে তাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। এদিকে, রাত আনুমানিক দেড়টায় গ্রামের পার্শ্ববর্তী বিজয়া বাজার চেৌকিদার সুরুজ মিয়া ও সিরাজ মিয়া তাকে দেখতে পান। চেৌকিদার সুরুজ মিয়া তাকে বাড়ি-ঘরের কথা জিজ্ঞাসা করলে কোনো উত্তর দেননি। তারা মেয়েটির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে টহল পুলিশের দ্বারস্থ হন। এএসআই মো. নুরু মিয়া রুহেনাকে বাজারের পার্শ্ববর্তী দূর্গাপূজা মন্ডপে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের জিম্মায় রাখেন।
বিজয়া বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি কিরণ শুক্ল বৈদ্য বলেন, মেয়েটি রাতে পূজামণ্ডপে ঢোকার চষ্টো করেছে। এ সময় একটি শিশুকে আছাড় মেরে আহত করেছে ও ঠাকুর সুমনকে মারধর করেছে।
মূর্তি ভাঙার অপবাদ দিয়ে ইসকন মন্দিরের সুমন ও নয়নের নেতৃত্বে রুহেনাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় হুড়োহুড়িতে এক শিশু আহত হয়েছে।
মেয়ের মামা বাচ্চু মিয়া ও লেবু মিয়া বলেন, আমরা চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র ও মানসিক রোগী হিসাবে ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাগানের লোকজন উল্টো তাদের ওপর আক্রমণ করার চষ্টো করে। অসহায় হয়ে তারা ফিরে আসেন। আইনজীবী নিয়ে আদালতে জামিন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। শারীরিক নির্যাতনের কারণে রুহেনা আরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। জেলহাজতে দেখতে গিয়েছিলেন, কিন্তু রুহেনা কাউকে চিনতে পারেননি। শরীরের ক্ষত নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নয়ন ও সুমন মন্দিরে হামলার কথা বলে ঘটনাটি লাইভ করে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কুলাউড়া থানায় রুহেনাকে নিয়ে আসার পর বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি কিরন শুক্ল বৈদ্য বাদী হয়ে মামলা করেন।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তাকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, মেয়েটির তো আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কথা।