Logo
Logo
×

সারাদেশ

অচল অবস্থায় পড়ে আছে রংপুর বিভাগের চার চিনিকল

Icon

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫১ পিএম

অচল অবস্থায় পড়ে আছে রংপুর বিভাগের চার চিনিকল

চার বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, গাইবান্ধার রংপুর সুগার মিল ও পঞ্চগড় সুগার মিল। চারটি চিনিকলের শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল লাখের উপরে। মিল বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কবে নাগাদ মিলগুলো চালু হবে তা কেউ জানেন না।

লোকসানের অজুহাত এবং আধুনিকায়নের নামে এসব চিনিকল বন্ধ করা হলেও চালু করার ব্যাপারে নেই কোনো উদ্যোগ। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে মিলগুলোর সব যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসপত্র।

এদিকে চিনিকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু স্থানীয় অর্থনীতিই সংকটে পড়েনি, অনিশ্চয়তায় পড়ে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষের জীবন ও জীবিকা।

শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে পরিকল্পিতভাবে এসব চিনিকল বন্ধ করেছে, যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব চিনিকলগুলো চালুর উদ্যাগ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সরেজমিনে রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার টিনের চালে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। কোথাও কোথাও আবার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। মরিচা পড়েছে অধিকাংশ যন্ত্রপাতিতে। আবার কোনো কোনোটি বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষায় ঢেকে রাখা হয়েছে পলিথিন দিয়ে। এক সময়ের কর্মমুখর শ্যামপুর সুগার মিলের বর্তমান চিত্র খুবই নাজুক। বাইরের চিত্র আরও ভয়াবহ। পুরো কারখানা ঢেকে গেছে ঝোপঝাড়, জঙ্গলে। অলস পড়ে থাকতে থাকতে নষ্টের পথে অসংখ্য যানবাহন। যে কজন কারখানা দেখভালের দায়িত্বে আছেন, তাদেরও বেতন বন্ধ পাঁচ মাস ধরে। অথচ ষাটের দশকে গড়ে ওঠা এসব কারখানাই উত্তরের অর্থনীতির বড় শক্তি ছিল।

২০২০ সালে লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল। যার চারটিই রংপুর বিভাগে। আধুনিকায়নের মধ্যদিয়ে এসব সুগার মিল চালুর কথা থকলেও দীর্ঘ সময়েও তার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একই অবস্থা দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, গাইবান্ধার রংপুর সুগার মিল ও পঞ্চগড় সুগার মিলের।

এদিকে বন্ধ হওয়া এসব চিনিকলের দৈনিক আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা ছিল গড়ে দেড় হাজার মেট্রিক টন। বছরে চিনি উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন। ফলে চাহিদার বড় অংশ জোগান আসতো এসব চিনিকল থেকে।

শ্যামপুর আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান মানিক জানিয়েছেন, কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আমলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর যোগসাজশে বন্ধ করেছে চিনিকলগুলো। এতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এ ব্যাপারে শ্যামপুর সুগার মিলের ইনচার্জ মো. মাসুদ সাদিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এরই মধ্যে কারখানাগুলোর সক্ষমতা, জনবলসহ নানা বিষয় যাচাই-বাছাই করেছে একটি তদন্ত কমিটি। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার মিলগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি আশাবাদি।

এদিকে লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা ও দেশীয় শিল্প রক্ষার দাবি উঠেছে, ‘বন্ধ নয়, যত দ্রুত সম্ভব আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এসব চিনিকলগুলো চালুর উদ্যাগ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম