নিয়মবহির্ভূতভাবে লাঞ্চ ভাতা, রাকাবের অপচয় সোয়া ৪ কোটি টাকা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধভাবে দুপুরের খাবার বাবদ ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) বিরুদ্ধে। ২০১৯-২১ দুই অর্থবছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুপুরের খাবার বাবদ এ টাকা খরচ করা হয়েছে।
সম্প্রতি নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে আপত্তি দিয়ে ব্যয়িত অর্থ ফেরত নিয়ে তহবিলে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাকাব কর্তৃপক্ষ অডিট আপত্তির বিষয়ে জবাব ও ব্যাখ্যা দিলেও তা সন্তোষজনক নয় বলে জানানো হয়েছে অডিট কমিটির পক্ষ থেকে।
অভিযোগ উঠেছে, অডিট আপত্তি হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুপুরের খাবার বাবদ টাকা ব্যয় চলমান রয়েছে। এর ফলে ব্যয়িত টাকার পরিমাণ আরও বেশি হবে। যদিও রাকাব কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে তারা দুপুরের খাবার বাবদ টাকা দিচ্ছেন। দেশের সব ব্যাংকেই এ ব্যবস্থা চালু আছে।
এদিকে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) দ্বিতীয় থেকে দশম গ্রেডের কর্মকর্তারাও দৈনিক উপস্থিতির জন্য ২০০ টাকা হারে লাঞ্চ ভাতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা আদেশ অনুযায়ী শুধু ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা দুপুরের খাবার বাবদ দৈনিক ২০০ টাকা হারে ভাতা পাবেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিচের গ্রেডের কর্মচারীরা এই ধরণের ভাতা প্রাপ্য হবে। কিন্তু সকল গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিনামূল্যে দুপুরের খাবার বা ভাতা পাবেন না।
অন্যদিকে রাজশাহীর রাকাবের প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় মুখ্য কার্যালয় রাজশাহীসহ এর আওতাধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নীলফামারী, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, বীরগঞ্জ, রংপুর, মিঠাপুকুর, গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জ শাখায় ২০১৯-২১ দুই অর্থবছরে নিয়মিতভাবে কর্মকর্তাদের ২০০ টাকা করে লাঞ্চ ভাতা দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাকরির বেতন ও ভাতাদি আদেশ লঙ্ঘিত হওয়ায় লাঞ্চ বাবদ ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অডিট আপত্তির যে জবাব রাকাবের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় নিষ্পত্তির জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানায় সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে অডিট কমিটি।
অডিট কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভিযোগগুলির ব্যাখ্যার সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর এ কারণে রাকাবের জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। বেতন ভাতার পরও এমন ভাতা নেওয়া বিধি-সম্মত নয়।
এদিকে অডিট আপত্তির পরও রাকাব তা আমলেই নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এখনো সব গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা লাঞ্চ ভাতা পাচ্ছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাতার এই নিয়ম বাংলাদেশের সব ব্যাংকেই চালু আছে। এ ব্যবস্থা হঠাৎ করে চালু হয়নি। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পে-স্কেলেও এটি উল্লেখ থাকে। এরপরও বিষয়টি নিয়ে অডিট আপত্তি হয়েছিল। আমরা জবাব দিয়েছিলাম। তবে তারা গ্রহণ করেনি। রাকাবে লাঞ্চ ভাতা এখনো চালু আছে।
এ বিষয়ে রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, লাঞ্চ ভাতা বাবদ টাকা ব্যয়ের বিষয়ে একটা অডিট আপত্তি হয়েছিল। সেটা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা। সর্বশেষ কী পরিস্থিতিতে আছে ঠিকমতো জেনে বলা যাবে।