ন্যায্যমূল্যের চাল বিতরণ কেন্দ্র করে শিক্ষককে পিটিয়ে জখম
যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৮ পিএম
বরগুনার তালতলীতে ন্যায্যমূল্যের চাল বিতরণ কেন্দ্র করে মাসুম বিল্লাহ নামে এক শিক্ষককে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন আহত স্কুলশিক্ষক।
বৃহস্পতিবার বিকালে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার ছোটবগী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষককে উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্বজনরা। শিক্ষক মাসুম বিল্লাহকে মারধরের ঘটনায় এলাকায় ও কমডেকা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছেন।
জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নে ন্যায্যমূল্যের চাল ডিলার ছোটবগী বাজারে বসে বিতরণ করতো। উপকারভোগীদের সুবিধার্থে ডিলার হারুন তালুকদার ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ মাসের চাল বিতরণের উদ্যোগ নেন। সেই অনুসারে তিনি গত বুধবার চাল ওই বিদ্যালয়ে এনে রাখেন। কিন্তু এতে রাজি হয়নি ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদের নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার ও তার লোকজন।
বৃহস্পতিবার ডিলার হারুন তালুকদার চাল বিতরণ শুরু করেন। সেই মুহূর্তে ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদারের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন যুবদল নেতাকর্মী এসে চাল ছিনিয়ে নিতে শুরু করেন। এতে বাধা দেন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য জাহিদুল ইসলাম মোল্লাসহ গাবতলী গ্রামের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে চাল বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় কমডেকা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ দুপক্ষকে শান্ত করেন এবং ঘটনার মীমাংসা করে দেন। তবে মনোয়ার সিকদার ও তার লোকজন এতে শান্ত হয়নি।
বিকালে শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ ছোটবগী বাজারে গেলে নারী ইউপি সদস্যের স্বামী মনোয়ার সিকদার তার সহযোগী কামরুল, আলমগীর সিকদার ও জহিরুল মোল্লা, বেল্লাল, রফিক সিকদার ও জব্বার প্যাদা তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. একেএম মনিরুল ইসলাম তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ওই রাতেই স্বজনরা তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনোয়ার সিকদারের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবদল নেতাকর্মী মিলে শিক্ষক মাসুম বিল্লাহকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন।
আহত শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি ছোটবগী বাজারে যাওয়ার পরপরই নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার, তার সহযোগী কামরুল, আলমগীর সিকদার, জহিরুল মোল্লা, রফিক সিকদার, জব্বার প্যাদা ও বেল্লাল আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আমি এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করছি।
ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, উপকারভোগীদের সুবিধার্থে ডিলার হারুন তালুকদার গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন এবং চাল এনে রাখেন। বৃহস্পতিবার চাল বিতরণ শুরু করলে নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার, তার সহযোগী কামরুল, আলমগীর সিকদারসহ ২০-২৫ জন যুবদল নেতাকর্মী এসে চাল ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এতে স্থানীয়রা বাধা দিলে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে শিক্ষক মাসুম বিল্লাহকে ছোটবগী বাজারে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আমরা এ ঘটনার শাস্তি দাবি করছি।
তবে অভিযুক্ত মনোয়ার সিকদার শিক্ষককে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ওই শিক্ষককে মারধর থেকে রক্ষা করতে গিয়েছি। এখন আমার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলছে আমি তাকে মারধর করেছি।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম মনিরুল ইসলাম বলেন, আহত শিক্ষককে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তালতলী থানার ওসি কালাম খান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।