Logo
Logo
×

সারাদেশ

যে জেলায় বসে ‘মাদকের পাইকারি হাট’

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৮ এএম

যে জেলায় বসে ‘মাদকের পাইকারি হাট’

ফাইল ছবি

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদকের পাইকারি হাট নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন শীর্ষ ৭ মাদক কারবারি। এলাকায় সীমান্তের সম্রাটখ্যাত তাদের কেবল সাধারণ মানুষ নন, খোদ পুলিশ প্রশাসনও ভয় পায়। সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ড এবং ভারত বাংলাদেশের সুবিধাজনক এলাকাজুড়ে তাদের বিচরণ।  গত ৫ আগস্টের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে তারা এখন সুবর্ণ সুযোগ ভোগ করছে। অনেকটা ফ্রি স্টাইলে টনে টনে মাদক রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং এর পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী তৎপরতা বন্ধ থাকায় ওই ৭ জন বিপুল অর্থের মালিক বনে গেছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয়রা জানান, ব্রাহ্মণপাড়ার ভারত সীমান্তের শশীদল, মল্লিকা দীঘি, বাগরা, গঙ্গানগর, আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফেনসিডিল, শত শত কেজি গাঁজা, লাখ লাখ ইয়াবা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, টেপেন্ডা এবং মাঝেমধ্যে আইস ও হেরোইন দেশে আসে। তাছাড়া অন্য অনেক নিষিদ্ধ পণ্যও ওইসব পয়েন্ট দিয়ে দেশে আনা হয়। সীমান্তের ওই ৫টি পয়েন্টের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ৭ শীর্ষ মাদকসম্রাটের হাতে। ভারত থেকে মাদকগুলো দেশে প্রবেশের পর সীমান্ত এলাকায় বসেই খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এসব শীর্ষ সম্রাটের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও তারা গ্রেফতার হন না।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বাগরা এলাকার মাদকসম্রাট মুরগি হেলালের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। শতাধিক ক্যারিয়ার এবং বেশ কয়েকটি কাভার্ড ভ্যানে তার মাদকের চালান যায় ঢাকার বিভিন্ন বারে। পিকআপ এবং সিএনজি করে জেলার ভেতরে বিভিন্ন স্থানেও মাদক পাচার করা হয়। মাদক ব্যবসা করে তিনি ঢাকায় একাধিক বাড়ি এবং ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।

শশীদল এলাকার রবি হোসেন এবং রুহুল আমিনের রয়েছে মাদকে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। সীমান্তের ওপারে এ দুজনকে বাংলাদেশের বস হিসাবে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় এ দুজনের বড় মাদকের সিন্ডিকেট রয়েছে। মাদক আনা-নেওয়ার জন্য তাদের দুই দেশে ক্যারিয়ার রয়েছে। অর্থাৎ ভারত ও বাংলাদেশে তাদের পৃথক শ্রমিক রয়েছে। তারা বেশ কয়েকটি মাদক মামলার আসামি। উপজেলার গঙ্গানগরের মাদক মাফিয়া ওয়াসিমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য ভয় পায়। ২৫টি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে তিনি প্রকাশ্যেই সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন মাদকের হটস্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার মাদকের ব্যবসা আরও রমরমা হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী জানায়, ৫ আগস্টের পর সে একটি রাজনৈতিক দলের শেল্টার পেয়ে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার অধীনে দেড় শতাধিক শ্রমিক মাদক বহনের কাজ করেন।

গঙ্গানগর এলাকার আনোয়ার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন এবং উজ্জ্বল আহমেদের রয়েছে পৃথক সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে বসে তারা ব্যবহার করেন ভারতের মোবাইল নেটওয়ার্ক। প্রতিদিন ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা এবং বিভিন্ন প্রকার মদ তারা দেশে আনছেন। এ তিনজন সীমান্তের পৃথক সড়ক ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে পুলিশ এবং বিজিবি তৎপর হলে তারা ভারতের বক্সগঞ্জ এলাকায় অবস্থান নেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও তাদের সোর্স রয়েছে। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানে করে নিয়মিত মাদক পাচার করেন এই তিন মাদক ব্যবসায়ী।

শশীদল এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, বার্গার মুরগি হেলাল, শশীদলের রবি, রহুল আমিন, গঙ্গানগরের ওয়াসিম, আনোয়ার, দেলোয়ার, উজ্জ্বলের নিয়ন্ত্রণের ব্রাহ্মণপাড়ার মাদকের হাট। মূলত তারা পাইকারি ব্যবসায়ী। ভারত থেকে মাদক বাংলাদেশে আনার পর তাদের কাছ থেকেই পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন দামি ব্র্যান্ডের মদ তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বারগুলোয় সাপ্লাই দেন। একই এলাকার আসাদ সরকার বলেন, তাদেরকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভয় পান। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশাল ক্যাডার বাহিনী। ওয়ারেন্ট থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। তারা প্রতিদিন মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা কামাই করে এবং বিভিন্ন জায়গায় টাকাপয়সা ঢালে। তাছাড়া এলাকায় পুলিশের ঝামেলা দেখলে মিনিটের মধ্যেই তারা সীমান্তের ওপারে চলে যায়। সেখানেও তাদের বাসা রয়েছে।

মল্লিকা দিঘীর আমিন হোসেন বলেন, পুলিশ, বিজিবি মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে তাদের শ্রমিকদের আটক করে। কিন্তু আসল ৭ জনের ধারেকাছেও যায় না। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমাদের এলাকায় কুরিয়ার সার্ভিসের অর্ধশতাধিক কাভার্ডভ্যান, পিকআপ যাতায়াত করে। এসব যানবাহন কী কারণে এখানে আসছে, তা কি পুলিশ জানে না? তিনি বলেন, ৫ আগস্টে পর এসব মাদক ব্যবসায়ী যে পরিমাণ টাকা কামাই করেছে, তাতে তাদের জীবনে আর কিছু করতে হবে না।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি এ থানায় সদ্য যোগদান করেছি। এ এলাকায় বেশকিছু মাদকসম্রাট রয়েছে বলে আমি জেনেছি। যে সাতজনের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা বিভিন্ন মাদক মামলার আসামি এবং শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ৬০ বিজিবির অধিনায়ক এএম জাবের বিন জাব্বার বলেন, সীমান্তে মানব পাচার রোধে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম