আমলাতান্ত্রিক জটিলতা
আটকে গেছে মধ্যপাড়া খনির ৩শ কোটি টাকার পাথর বিক্রি
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৩ পিএম
দিনাজপুরের পার্বতীপুর মধ্যপাড়ায় খনি থেকে উত্তোলিত ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার মে. টন পাথর মজুত পড়ে আছে তিন বছর ধরে। বাংলাদেশ রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ডে নদী শাসন ও নানা স্থাপনায় কাজের উপযোগী করে এসব পাথর প্রস্তর খনির সার্ফেস ভাগে রাখা হয়েছে পাহাড়সম স্তূপ করে।
এসবের মধ্যে রেল উপযোগী পাঁচ দশমিক ৩০ লাখ মে. টন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য দুই দশমিক ৩০ লাখ মে. টন পাথর। আমলাতান্ত্রিক জঠিলতা, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং অসাধু কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক প্রীতি সেই সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু চুক্তির ফলে আটকে গেছে পাথরগুলোর ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া। অথচ দেশীয় মূল্যের চেয়ে চড়া দামে পাথর আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে।
মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রিতে আরও একটি বড় অন্তরায় করে রাখা হয়েছে বলা যায় অনেকটা কৃত্রিম উপায়ে। আর তা হচ্ছে খনির সঙ্গে সংযোগকৃত ১৩ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ পাথর সরবরাহকারী রেলপথ। যেটি ভবানীপুর রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত।
এ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছিল খনি থেকে পাথর উত্তোলনের গোড়ার দিকে। খনি থেকে রেলপথে দেশের নানা স্থানে সরবরাহের জন্য। কিন্তু ট্রাক মালিকদের একটি মাফিয়া চক্র রেলপথে পাথর না নিয়ে সড়কপথে নেওয়া শুরু করে। যে কারণে রেলপথটি ছয় মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ওই রেলপথের আট দশমিক আট কিমি. রেললাইন চুরি করে নিয়ে গেছে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে পেট্রোবাংলার একটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে।
বর্তমানে সড়কপথে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মধ্যপাড়া থেকে পাথর সরবরাহ করতে প্রতি টনে খরচ পড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। চট্টগ্রাম এলাকায় নিতে পড়ে ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা।
পেট্রোবাংলার মার্কেটিং সূত্র জানায়, অতি দ্রুত রেলপথটি সংস্কার করে রেলওয়ে ওয়াগন বা রেল ট্রাকে পরিবহণ কাজ শুরু করলে প্রতিটন পাথর পরিবহণে খরচ পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মাত্র। আর চট্টগ্রাম এলাকায় নিতে খরচ পড়বে প্রতিটন ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা মাত্র। এতে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তা পর্যায় লোকসান কমে আসবে প্রায় অর্ধেকাংশে।
দেশে পাথর প্রাপ্তির উৎসগুলো হচ্ছে-একমাত্র মধ্যপাড়া খনি পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী। সারা দেশে প্রতিবছর পাথর চাহিদা দুই কোটি ১৬ লাখ মে. টন প্রায়। শুধু মধ্যপাড়া থেকেই মেলে প্রতিবছর ১৫ লাখ মে. টন পাথর। এরপরও রয়েছে অন্যান্য উৎস। মজার ব্যাপার হলো, এত বেশি চাহিদা থাকার পরও দেশীয় পাথর ব্যবহার না করে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি এখন পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
এদিকে রেলের একটি সূত্র জানায়, পার্বতীপুর থেকে বুড়িমারী রেলপথটি ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করা হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা থাকলে মধ্যপাড়ার পাথরগুলো ব্যবহার করতে পারে অনায়াসেই। এতে দেশের মুদ্রা দেশেই থাকে। বিষয়গুলো নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ও পেট্রোবাংলার প্রকৌশলী অপারশন অ্যান্ড মাইনস কামরুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলার বারবার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এদিকে মধ্যপাড়া পাথর খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে জানান, ‘আমি অল্প কদিন হয় এসেছি। কেন পাথরগুলো সংস্থাগুলো নেয়নি তা বলা যাচ্ছে না এ মুহূর্তে। তবে দেশীয় পাথর এবং আমদানি পাথরের চেয়ে মধ্যপাড়ার পাথর অনেক উন্নত তাই নেওয়া উচিত ছিল।