লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই- প্রমাণ করলেন নাঈম-শারমীন দম্পতি
এটিএম নিজাম, কিশোরগঞ্জ ব্যুরো
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞানার্জনের সময়। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের নাঈম-শারমীন দম্পতি যেন সেই সত্যটাকেই মহিমান্বিত করেছেন বয়সের বিস্তর ব্যবধান নিয়ে এবার একসঙ্গে এইচএসসি পাশ করে।
আর এ পরীক্ষায় ৪৩ বছর বয়সি মো. বদিউল আলম (নাঈম) পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ২৯ এবং স্ত্রী ৩৩ বছর বয়সি শারমীন আক্তার পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৫।
এ ঘটনা জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে এ দম্পতির এমন সাফল্যগাথা।
তারা দুজনই এবার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, পেশায় ঠিকাদার নাঈম জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের দাড়িয়াকান্দি গ্রামের মো. কেনু মিয়া ও মোছাম্মাৎ সাজেদা দম্পতির ছেলে। ১৯৯৭ সালে তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালে তিনি বিয়ে করেন কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মঙ্গলকান্দি গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন ও মায়া বেগম দম্পতির মেয়ে শারমীন আক্তারকে। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় শারমীনের। ২০১০ সালে তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সন্তান গর্ভে আসায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি। পরে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি তার।
বর্তমানে নাঈম-শারমীন দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলেসন্তান রয়েছে। তাদের বড় মেয়ে বুশরা আক্তার বীথি স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও মেজো ছেলে রেদোয়ান আলম সিয়াম একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে তাসনীমকে (৫) এখনো স্কুলে ভর্তি করাননি।
তারা দুইজন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নাঈম জিপিএ ৪ দশমিক ৯৫ এবং স্ত্রী শারমীন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
শারমীন আক্তার বলেন, ২০২০ সালে বড় মেয়ে বীথি ও তৎকালীন কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনার উৎসাহে নতুন করে পড়াশোনা করার আগ্রহ জাগে তাদের। সেই থেকে মনের জোর এবং স্বজনদের উৎসাহে আবার পড়াশোনা শুরু করে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেছি।
বদিউল আলম (নাঈম) বলেন, বিয়ের আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও কয়েকবার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু ব্যবসা ও সাংসারিক চাপে শেষপর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। আমাদের এ সাফল্যে আমাদের পরিবারসহ সবাই আনন্দিত হয়েছে।