৫০ বছর পর রাস্তা পাকা করছে রাধানগর গ্রামবাসী
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম
জয়পুরহাটের কালাইয়ের পুনট ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মানুষের নিজস্ব অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে ইট বিছানোর কাজ শুরু হয়েছে।রাধানগর গ্রামের তিন মাথা মোড় থেকে একই এলাকার ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পর্যন্ত মোট ৩০০ ফুট কাঁচা রাস্তাটিতে ইট বিছানোর কাজ চলছে।
সোমবার সকাল থেকে রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবক ও অধ্যক্ষ আব্দুল করিমের নেতৃত্বে ওই গ্রামের নানা বয়সি শতাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ কাজে অংশ নেন। রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে আশপাশের ৪-৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হবে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, রাধানগর এলতা, ইমামপুর, হাটশেখা আদর্শগ্রামসহ গ্রামের প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষের কাঁচা রাস্তা থাকলেও তা ছিল চলাচলের অনুপযোগী। ৫০ বছর ধরে এমন দূরাবস্থা থাকলেও দেখার কেউ ছিল না। ফলে সঠিক সময়ে কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত ছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া শিক্ষা ও চিকিৎসা থেকেও তারা পিছিয়ে ছিলেন বলে স্থানীয়রা মন্তব্য করেন।
রাধানগর গ্রামের আব্দুল হামিদ, আলম হোসেন, পার্শ্ববর্তী ইমামপুর গ্রামের হাফিজার রহমান, সাইদুর রহমানসহ অন্য কৃষকরা জানান, কাঁচা রাস্তাটি বর্ষায় কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয় বলে তারা ধান, পাট, শাক-সবজিসহ তাদের উৎপাদিত কৃষি ফসল বাজারজাত করতে পারতেন না। এ কারণে যুগের পর যুগ তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। এছাড়া প্রসূতিসহ জরুরি রোগীদের প্রয়োজনের সময় হাসপাতালে নিতে পারেননি।
রাধানগর গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী মিম আক্তার, স্কুল শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন ও হোসাইন আহম্মেদসহ এলাকার শিক্ষার্থীরা জানান, বর্ষার পুরো সময় তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি বলে শিক্ষা গ্রহণে পিছিয়ে পড়েছে। তাই এত বছরেও এই এলাকা থেকে আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো উচ্চপদে কেউ চাকরির সুযোগ পায়নি।
দেশে সরকার ও জনপ্রতিনিধি বদল হলেও তাদের এ রাস্তাটি পাকাকরণের কেউ কোনো উদ্যোগ নেননি বলে এত দিন তারা পিছিয়ে ছিলেন। এ অবস্থায় রাস্তার ইট বিছানোর কাজ শেষ হলে তারাও দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতে সংযুক্ত হতে পারবেন বলেও আশা করেন এলাকাবাসী। এ বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের উদ্যোগে সাধারণ মানুষকে আত্মনির্ভরশীল হতে ব্যাপকভাবে সচেতন করা হচ্ছে। বিষয়টি তারই অংশ বলে স্বেচ্ছাশ্রমে যারা রাস্তাটি নির্মাণ করছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সেই সঙ্গে এ ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।