প্রতিপক্ষকে মারতে গিয়ে পালটা হামলায় ছাত্রদল কর্মী নিহত
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৬ পিএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় প্রতিপক্ষকে মারতে গিয়ে পাল্টা হামলায় ফারুক সরদার (২৮) নামে এক ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফারুক দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লিচিকিৎসক শহিদ সরদারের ছেলে। তিনি দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন বলে ছাত্রদলের স্থানীয় নেতারা দাবি করেন। ফারুক বিবাহিত এবং এক বছর বয়সি এক কন্যাসন্তানের জনক।
হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ফারুকের বন্ধু আলামিন (২১) নামে আরেক যুবক। তিনি দৌলতদিয়া শামসু মাস্টারপাড়ার আব্দুস সালামের ছেলে। এ ঘটনার পর যৌনপল্লিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, যৌনপল্লির অভ্যন্তরে ও দুর্গাপূজার মেলায় জুয়া ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ফারুক ও রিপনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে চর এলাকার মাটি ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এসব দ্বন্দ্বের জেরে দুই দিন আগে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। শনিবার রাতে ফারুক ৪-৫ জন বন্ধু মিলে ১নং গেট দিয়ে যৌনপল্লির ভেতরে রিপনকে (৩০) খুঁজতে যান। এ সময় ফারুকের বাবা তাকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পল্লির ভেতরে ফারুক রিপনের দোকানে গিয়ে তার ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে রিপন পাশে থাকা ডাব কাটার ধারালো দা দিয়ে ফারুকের ওপর পালটা হামলা করে এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত ফারুক ও হামলাকারী রিপন উভয়ই মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
তবে নিহত ফারুকের ভাই মনিরুজ্জামান দাবি করে বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা শুরুর দিন থেকে দৌলতদিয়া রেলস্টেশনের পাশে মেলা বসেছে। ওই মেলায় জুয়ার আসর বসায় স্থানীয় রিপন ও তার সহযোগীরা। মেলার বিভিন্ন দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদাও তুলছিল তারা। তাদের জুয়ার আসর বসানোর ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করে আসছিল ফারুক। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে রিপনের মুদি দোকানে গিয়ে আবারও রিপনকে চাঁদাবাজি ও জুয়ার আসর বন্ধ করতে বলে ফারুক। এ সময় রিপন ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুকের মাথা, পিঠ, দুই পা ও বাম হাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এতে ফারুকের মৃত্যু হয়।
পুলিশ ফারুক হত্যার ঘটনায় হুমায়ুন (২৫) নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
ফারুক হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত রিপন দৌলতদিয়া ইউনিয়নের আইনদ্দিন বেপারিপাড়ার রমজান ফকিরের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
দৌলতদিয়া বাজার পরিষদের সভাপতি ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মোহন মণ্ডল বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে দৌলতদিয়া বাজারের পাশে রেলস্টেশন এলাকায় অল্প কিছু দোকানপাট বসেছে। তবে এবার দোকান মালিকদের সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কোনো চাঁদা দিতে হচ্ছে না। পূর্বের ব্যক্তিগত শত্রুতা হতে হামলা ও নিহতের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, রিপন ও ফারুক গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তিন দিন আগে দৌলতদিয়া শহিদ মিনার এলাকায় রিপন ও ফারুকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফারুক কয়েকজন যুবককে নিয়ে যৌনপল্লিতে রিপনের দোকানে গিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। রিপন ফারুককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত রিপনসহ অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।