রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক
আ.লীগপন্থি কর্মচারীদের ডিগবাজির চেষ্টা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
গত ১৫ বছরই তারা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মচারী সংসদের নেতা হিসেবে মহানগর শ্রমিক লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ হাসিল করেছেন।
গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর এখন সেসব কর্মচারী নেতারা ডিগবাজির চেষ্টা করছেন। তারা এখন বলছেন, আমরা বিএনপি করি। রাকাবে বিএনপিপন্থি কর্মচারী সংগঠন কর্মচারী পরিষদে পদ নিতে বিভিন্নভাবে তদবির করছেন তারা।
রাজশাহীর বিএনপি নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। যদিও এসব নেতারা এখনো কাগজে-কলমে শ্রমিক লীগ ও কমচারি সংসদের পদেই রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে আওয়ামীপন্থি কর্মচারী সংসদ ও বিএনপিপন্থি কর্মচারী পরিষদ নামে দু’টি কর্মচারী ইউনিয়ন রয়েছে।
গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামীপন্থি কর্মচারী সংসদের নেতাদের চাপে বিএনপিপন্থি কর্মচারী পরিষদের নেতাকর্মীদেরকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ এই সময়ে ব্যাংকে সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মচারী সংসদ।
রাকাব কর্মচারী সংসদের সভাপতি হাসিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের পদেও আছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই হাসিবুল ইসলাম ও ফরিদ হোসেন পুণরায় কর্মচারী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীপন্থি কর্মচারী নেতারা বিএনপিপন্থি কর্মচারী নেতাদেরকে বদলি ও পদায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক হয়রানি করেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের নতুন কমিটিতে কর্মচারী সংসদ সভাপতি হাসিবুল ইসলাম শিক্ষা সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ফরিদ হোসেনকে সহ-সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। কর্মচারী সংসদের এই দুই নেতাকে অতীতে বিভিন্ন সময় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ গত ৫ আগষ্টেও তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমানোর কর্মসূচিতে অংশ নেন। গত ৫ আগষ্ট গত সরকারের পতনের পর থেকে হাসিবুল ইসলাম ও ফরিদ হোসেন বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন।
গত মাসে হাসিবুল ইসলামকে রাকাবের মোহনপুর শাখায় ও ফরিদ হোসেনকে বাঘা শাখায় বদলি করা হয়। তবে ফরিদ হোসেন কয়েকদিন পরেই বাঘা শাখা থেকে বদলি হয়ে নগরীর কাজীহাটা শাখায় চলে আসেন।
এদিকে হাসিবুল ইসলাম ও ফরিদ হোসেন দাবি করেছেন, ছাত্রজীবনে তারা প্রথমে ছাত্রদল ও পরে যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটিতে তাদেরকে পদ দেওয়া হয় সম্মতি না নিয়ে জোর করে। ফলে আমরা ২০ এপ্রিল শ্রমিক লীগের পদ থেকে পদত্যাগ করি। আমরা শ্রমিক লীগের কেউ নই।
অন্যদিকে, নিজেরা শ্রমিক লীগের পদ থেকে পদত্যাগের দাবি করলেও শ্রমিক লীগের রাজশাহী মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক হাসানুজ্জামান ফিরোজ বলেন, হাসিবুল ও ফরিদ দুইজন গত ৫ আগষ্টের কয়েকদিন পরে গত ২০ এপ্রিলের তারিখ দিয়ে লেখা সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র দিতে এসেছিলেন। আমি তাদেরকে জানাই পদত্যাগ করতে হলে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নানের বরাবর দিতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সভাপতি পলাতক থাকায় তারা রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লেখা একটি পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যান।
রাজশাহীর শ্রমিক লীগ নেতারা বলেন, হাসিবুল ও ফরিদ শ্রমিক লীগ থেকে পেছনের তারিখে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও এখনো তারা রাকাবের আওয়ামীপন্থি কর্মচারী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল আছেন।
জানতে চাইলে ফরিদ হোসেন বলেন, আমাকে জোর করে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছিল। জানতে পেরে সাতদিন পরে পদত্যাগ করেছি। ফরিদ দাবি আরও করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক নেতা আমার আত্মীয়। তার পরামর্শে শ্রমিক লীগের পদ ছাড়ি। আমি প্রথমে ছাত্রদল ও পরে যুবদলের রাজনীতি করেছি। এখন বিএনপি করছি।
এদিকে হাসিবুল ও ফরিদকে জোর করে শ্রমিক লীগে পদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন বলেন, তারা বহু তদবির ও আবেদন করে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটিতে পদ নিয়েছিলেন। তারা গত ৫ আগষ্টের পর পদত্যাগপত্র লিখে জমা দিয়েছেন বলে শুনেছি। পেছনের তারিখে দেওয়া পদত্যাগপত্র তাই গৃহীত হয়নি। হতে পারে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা এখন বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে রাকাবে বিএনপিপন্থি কর্মচারীদের সংগঠন কর্মচারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, গত ১৫ বছর পরিষদের সদস্যদের ওপর নির্যাতনের শেষ ছিল না। গত ১৫ বছর যারা আওয়ামীপন্থি কর্মচারী সংসদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কেউ কেউ বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে কর্মচারী পরিষদে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। তবে তাদের সেই চেষ্টা সফল হবে না বলে জানান বিএনপিপন্থি এই কর্মচারী নেতা।