নানা বাধা-বিপত্তি ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে লিবিয়া হয়ে স্বপ্নের দেশ ইতালি গিয়েছিলেন সেলিম শেখ (৩২)। তবে ভাগ্যের চাকা ঘোরার আগেই সেই দেশে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি।

নিহত সেলিম ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড়খারদিয়া গ্রামের মো. সেকেন শেখের ছেলে। মা-বাবাসহ চার ভাইবোন ও তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। সেলিমের মৃত্যুর খবরে স্বজনরা শোকে কাতর অবস্থায় তার লাশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। 

বৃহস্পতিবার সেলিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ও সেলিমের বাবা সেকেন শেখ।  

স্থানীয়রা জানান, সেলিম ইতালিতে গিয়েছিলেন। গত ৬ অক্টোবর ইতালির একটি শহরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুর খবরে পরিবারের সদস্যদের মাঝে শোক নেমে এসেছে। গত ৪ দিন ধরে সেলিমের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইতালিতে থাকা প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ করছেন তার পরিবার।

নিহত সেলিমের স্বজনরা জানান, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় সেলিম। তার স্ত্রী ও দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। তার ওপর সংসারের দায়িত্ব ছিল বেশি। তিনি স্থানীয় ময়েনদিয়া বাজারে একটি মুদি দোকান চালাতেন। তবে দোকান করে পোষাতে পারছিলেন না। তাই স্ত্রী-সন্তানদের ভালো রাখতে ও উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার পরিকল্পনা নেন। কিন্তু সরাসরি ইতালি যাওয়ার মতো অর্থ ছিল না তার।

যে কারণে গত এক বছর আগে দালালদের মাধ্যমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে গিয়ে পৌঁছান তিনি। ইতালি গিয়ে অন্তত পাঁচ মাস শরণার্থী ক্যাম্পে আটকা ছিলেন সেলিম। পরে দীর্ঘ কয়েক মাস চেষ্টার পর অনুমতি পেয়ে সেখানে কাজ শুরু করেন। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কাজ শুরুর কয়েক দিনের মাথায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা মারা যান সেলিম। এখন তার ছোট সন্তানদের কী হবে, তারা কিভাবে চলবে সেই চিন্তায় রয়েছে পরিবার।

সেলিমের বাবা সেকেন শেখ বলেন, আমার ছেলে ইতালিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে, এটাই শুধু জানি। এখন তার লাশ কোথায় আছে, তাও জানি না। আমার সন্তানের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিচুর রহমান বালী বলেন, সেলিমের লাশ দেশের ফিরিয়ে আনার জন্য যদি তার পরিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন, তাহলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাবেন।