মাদ্রাসাছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে ৪ শিক্ষকের অপসারণ দাবি
পূবাইল (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
গাজীপুর মহানগরের পূবাইল রহমানিয়া আলিম মডেল মাদ্রাসার ছাত্রীদের ওপর শ্লীলতাহানিসহ বিভিন্ন অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা ওই চার শিক্ষকের শাস্তি ও অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ করলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিমিষেই ভাইরাল হয় যায়। অভিযুক্ত ক্লাস শিক্ষকরা হলেন- আনিছুর রহমান, ফজলুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন ও শেখ শহিদুল ইসলাম।
বুধবার বিকালে নগরীর ৪১নং ওয়ার্ডের পূবাইল থানার হাড়িবাড়ির টেক পূবাইল রহমানিয়া মডেল মাদ্রাসায় গিয়ে এমনটিই দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা যায়- পূবাইল রহমানিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ৪ জন শিক্ষকের নাম ধরে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অপসারণ দাবি করে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের একজন ছাড়া বাকিরা গা-ঢাকা দিয়েছেন, ক্লাস নিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে পূবাইল বিএনপির ৪১নং ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার দেওয়ানকে আহবায়ক করে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটি বরাবরও একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তদন্ত কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটির ওপর ভরসা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান আনোয়ার দেওয়ান যুগান্তরকে জানান-যদিও সাত কর্মদিবসে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার কথা কিন্তু পূজার ছুটির জন্য সঠিক সময়ে দিতে পারছি না। কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন মেজু জানান, আমরা তদন্ত করে রিপোর্ট দেব বাকি ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নেবে।
নির্যাতিত ছাত্রীদের অভিভাবকেরা মান-সম্মানের ভয়ে অনেক অভিভাবক তাদের ক্লাসে আসতে দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছে সহপাঠীরা।
শামিম নামে এক অভিভাবক জানান, আমার মেয়ে আমার কাছে নালিশ দিয়েছে। আমিও বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায় এমন শিক্ষক কিভাবে চাকরি পায়। তদন্ত করে ওদের শাস্তির আওতায় না আনলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।
আরেক ছাত্রীর মা আকলিমা জানান অভিযুক্তরা আমাদের এলাকার বদনাম করেছেন। আমার মেয়ের গায়ে হাত দেওয়াসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছেন। আমি এদের ন্যক্কারজনক বিচার চাই।
লুবা ইসলাম জানান, আমি ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য ছিলাম তিন টার্ম। আমিও বিষয়গুলো শুনে অবাক হয়েছি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমিও তদন্তপূর্বক তাদের বিচার চাই।
ভিকটিম ছাত্রীরা জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমাদের গায়ে হাত দিতেন। ছেলেদের পাশে না বসে আমাদের বেঞ্চে গা-ঘেঁষে বসে পড়েন। ছাত্রদের সামনেই কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। আর প্রাইভেট পড়তে গেলে শ্লীলতাহানিসহ অশোভন আচরণ করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে আনিছুর রহমান জানান, আমার নাম ছাত্রীরা আগে বলেনি। অন্য তিনজনের কথা বলেছে। আমি অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করব।
পূবাইল রহমানিয়া আলিম মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কুতুবউদ্দিন বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আর অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হলে আমিও ওদের উপযুক্ত বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি সোহেল রানা যুগান্তরকে জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।