কক্সবাজারের পেকুয়ায়
যুবলীগ নেতার অত্যাচার থেকে বাঁচতে কাফনের কাপড় পরে অনশন
কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বারেক, কৃষক লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডার আমিনুর রশিদসহ তাদের ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে বাড়িছাড়া একটি অসহায় পরিবার।
আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের এই নেতারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভুক্তভোগীর বসতবাড়ি ও জমি জবরদখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, বসতবাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে।
তাদের এমন অত্যাচার থেকে বাঁচতে পেকুয়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে কাফনের কাপড় পরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশনে বসেছেন ভুক্তভোগী ওই পরিবারের ১০ জন সদস্য।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে পেকুয়া উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে কাফনের কাপড় পরে তারা অপশনে বসেন। তারা সবাই উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের জালিয়াকাটা এলাকার মৃত মুকতার আহমদের পরিবারের সদস্য।
অনশনে বসে ভুক্তভোগী নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি আজকে আমার পরিবার নিয়ে এই শহিদ মিনারে অনশনে আসার কারণ হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। যারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবৎ এ দেশের মানুষকে জুলুম নির্যাতন করেছে। আমাদের ওপর একের পর এক নির্যাতন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় চাওয়ায় আমাদের পরিবারের ২১ জন সদস্যকে ঘরছাড়া করেছে। আমরা আমাদের ঘরে যাওয়ার জন্য এবং তাদের জুলুম নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে আজ অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি। আমি যার বিরুদ্ধে কথা বলছি সে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বারেক ও তার সহযোগী ক্যাডার কৃষক লীগ নেতা মামুন, ছাত্রলীগ নেতা আমিনুর রশিদ।
২০১৩ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে। তারা আমার শতবর্ষী বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করেছে, আমার ছোট বোনকে মারধর করেছে। এসব ঘটনায় মামলা চলমান আছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের জায়গা জবরদখল করা। এমতাবস্থায় আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে আইনি আশ্রয় চেয়েছি, আদালতের কাছে নিষেধাজ্ঞার আদেশ চাই। আদালত ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
এ আদেশ তারা কোনোভাবেই মানতে রাজি নয়। পরে ২০১৯ সালে জেলা জজ আদালতে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে তারা। আদালতের আপিল শুনানিতে তারা বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে না পারার কারণে আদালত তাদের আপিল খারিজ করে দেন এবং তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ পুনর্বহাল রাখেন। যেহেতু তারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতেছে আমরা পুনরায় চকরিয়া সহকারী জজ আদালতের কাছে আমাদের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য একটি আবেদন দেই। আদালতের ৩১ নম্বর আদেশ অনুযায়ী পেকুয়া থানার তৎকালীন ওসিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন; কিন্তু তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ আমাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি।
শুধু তাই নয়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন তারা আমার বাড়িতে প্রকাশ্যে গুলি করে সবাইকে ঘরছাড়া করে। কিন্তু পেকুয়া থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বাড়িতে গুলি করার সঠিক তথ্য পাওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। বরং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো দুটি মামলা রুজু করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আমার পরিবারের লোকজন ঘরছাড়া হয়ে আছি। তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে আমাদের আর কোনো উপায় নেই। তাই আজকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশনে বসেছি।
এ ব্যাপারে জানতে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বারকের মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়েছে কিন্তু সংযোগ পাওয়া যায়নি।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা যুগান্তরকে বলেন, যারা অনশনে করতেছেন তারা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আমরা আইনগত সহায়তা দিতে রাজি আছি। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে মামলা দিলে আমরা মামলা নেব।