Logo
Logo
×

সারাদেশ

আ.লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহারে খাসজমি দখল

কমলনগরের স্বাস্থ্য সহকারি সারোয়ার আঙুল ফুলে কলাগাছ

Icon

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০৬ পিএম

কমলনগরের স্বাস্থ্য সহকারি সারোয়ার আঙুল ফুলে কলাগাছ

মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিক ব্যক্তির নামে-বেনামে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মুল্যের এক একর খাসজমি নিজের কব্জায় নিয়ে ওই জমিতে মার্কেট নির্মাণ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মচারী। এছাড়া ভুলুয়া নদীর নিকটবর্তী একাধিক মাছের খামারও রয়েছে তার। আছে স্থানীয় ফজুমিয়ারহাট বাজারে নিজ স্ত্রীর নামে একটি ও নিজের নামে দুটি দোকানভিটা। যার মূল্য অন্তত ৩০ লাখ টাকা। 

এছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব বিস্তার করে এবং ইজারা মূল্য ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে ফজুমিয়ারহাট বাজার ইজারাদার হয়ে সারোয়ার এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। 

স্থানীয় সূত্রের এক হিসাব মতে, স্বাস্থ্য সহকারী পদের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী সারোয়ার এখন প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। এদিকে তার এ আর্থিক পরিবর্তনকে অস্বাভাবিক কিছু মনে করছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারীর পদে চাকরিরত থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পে কিংবা স্বাস্থ্য  সচেতনতামুলক কোনো কাজে দেখা যায় না তাকে। চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা মৃত আলী আহম্মদের ছেলে গোলাম সারোয়ার এক সময় ইউনিয়ন ছাত্রলীগর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে উপজেলা যুবলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হন।

২০১০ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব ও পরিচয়ে চরকাদিরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী পদের চাকরিতে নিয়াগ পান। 

বদলি নেন তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারি (মাঠকর্মী) পদে। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। 

নিয়মিত কর্মস্থল ফাঁকি দিয়ে দলীয় মিটিং মিছিল ও বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে গেছেন দাপটের সঙ্গে। বেপরোয়া দলবাজির পাশাপাশি সরকারি চাকরি দুইটাই চালিয়েছেন সমানতালে।

অভিযোগ রয়েছে, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের আ.লীগের সাবেক এমপি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে ওপেন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা, দমন-পীড়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছেন এ সারোয়ার। এ প্রতিবেদকের হাতে তার উস্কানিমূলক একাধিক বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কমলনগর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মেছবাহ উদ্দীন আহমেদ বাপ্পির দোয়াত কলম মার্কার পক্ষে চরকাদিরা ইউনিয়নের প্রধান সমন্বয়কের প্রকাশ্য দায়িত্ব পালন করেন সারোয়ার।  

যুবলীগ নেতার পরিচয়ে দাপুটে সারোয়ার সকল অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে চলেছেন। তার অনিয়ম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি এতদিন। 

জুলাই বিপ্লবে আ.লীগ সরকার পতনের পর তার অবৈধ দখলকাণ্ডের ও অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলছেন কেউ কেউ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা মৌজার এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত এক একর খাসজমি তার স্ত্রী- আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় কয়েকজনের নামে বন্দোবস্ত পাইয়ে দিতে ভূমি অফিস কেন্দ্রিক সহযোগিতা করেন সারোয়ার। পরে ওই জমি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নিজের নামে ভাগিয়ে নেন। এভাবে অবৈধ উপায়ে ভাগিয়ে নেওয়া এক একর ১২ শতাংশ জমি স্থানীয় ভুমি অফিস কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কৌশলে নিজের নামে নামজারি কর নেন সারোয়ার। যার নামজারি নথি নম্বর ১৬৩৭/১৯। পরে ওই জমিতে ১০ কক্ষবিশিষ্ট একটি মার্কেট নির্মাণ করে নাম রেখেছেন ‘সারোয়ার মার্কেট'। ওই মার্কেট নির্মাণের জন্য পাশের ভুলুয়া নদীর ওপর নির্মানাধীন ব্রিজ সংলগ্ন সংযোগ রাস্তার প্রায় ১০ লাখ টাকার বালু দলীয় প্রভাবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, সারোয়ার সরকারি চাকরি কাগজে কলমে করলেও মুলত রাজনীতিই ছিল তার পেশা। কমলনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি বাপ্পির ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি খাসজমি নিজের নামে নামজারি করে নিয়েছেন সারোয়ার। 

এছাড়া  ভুলুয়া নদীর নিকটবর্তী অন্তত ৮ একর খাস জমি কিনে নিয়ে সেখানে মাছের চাষ করছেন। 

তারা বলেন, একজন মাঠকর্মী হয়ে প্রায় ৯ একর জমির মালিক হওয়া, মাছের খামার, বাজার ইজারা নেওয়াসহ অল্পদিনের ব্যবধানে অঢেল সম্পত্তির মালিক কীভাবে অথবা সম্পত্তির উৎস কী? তা খতিয়ে দেখা দরকার। 

এদিকে অভিযুক্ত গোলাম সারোয়ার বলেন, মার্কেট নির্মাণের ওই জমিটি খাসখতিয়ানভুক্ত ঠিকই। তবে আমার স্ত্রী ও ভাইয়ের নামে বন্দোবস্ত থাকায় তাদের থেকে ক্রয় করে নিয়েছি। তাছাড়া আমার মায়ের থেকেও প্রাপ্ত সম্পত্তি রয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে জমির দাম অনেক বেড়েছে। আমি অবৈধভাব কোনো জমি গ্রহণ করিনি। রাজনীতি করতাম তবে, সিরিয়াস ছিলাম না।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী বলেন, খোঁজ খবর নেওয়ার পর রাজনীতির বিষয়ে বিধিমতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন। 

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শামসুদ্দিন মো. রেজা জানান, এসব বিষয় আগে কেউ জানায়নি। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম