Logo
Logo
×

সারাদেশ

যুবদল নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সংবাদ সম্মেলন

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম

যুবদল নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সংবাদ সম্মেলন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর কক্সবাজারের রামুতে নৈরাজ্য চালনোর অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবদল নেতা জাবেদ ইকবালের বিরুদ্ধে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও দাবি ভুক্তভোগীদের। 

সোমবার কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী উম্মে আলীয়া মুলতানা মীমও উপস্থিত ছিলেন। 

জাবেদ ইকবাল কক্সবাজার জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রামু উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোক্তার আহম্মদ মেম্বারের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে হোসাইন শরিফ বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপির নাম ব্যবহার করে কক্সবাজার জেলা যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল, তার ভাই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবছার কামাল এবং তার বাবা রামু উপজেলা বিএনপি নেতা মোক্তার আহম্মদ মেম্বারের নেতৃত্বে দখল, মামলা ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর প্রায় ১৬টি পরিবারে হামলা চালিয়েছে এই গ্যাং। ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার পরিবারসহ সাতটি পরিবারের ১৬ জনকে মামলায় জড়িয়েছে জাবেদ ইকবাল। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের কেউ দোকানি, কেউ প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসায়ী, কেউ প্রবাসী, কেউ আবার বেসরকারি সংস্থায় চাকরিজীবী এবং জনপ্রতিনিধি। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আমার ভাইরা ভাই আজ ঘরছাড়া।

তথ্য বলছে, ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ও রামু উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পানের ছড়া ক্যাম্পপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ড্রেজার মেশিন, একটি পাম্প, একটি ট্রলি গাড়ি, ৩টি পাইপ জব্দ করে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জব্দকৃত মামলামাল গোপন রেখে ৩ লাখ ঘনফুট মাটি জব্দ দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আওসাফুল ইসলাম। তবে মামলায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে এলাকায় অবস্থান করেন না এমন ব্যক্তি, প্রবাসীদের আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তাদের মধ্যে ১২নং আসামি ফারুক এবং তার ভাই ১৩নং আসামি ইসমাইল দুইজনই এক দশক ধরে কক্সবাজার শহরের আছাদ কমপ্লেক্সে প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসায়ী, ৩নং আসামি আব্দু ছালাম একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থায় চাকরি করেন। ২নং আসামি করা হয়েছে ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার ছৈয়দ আলমকে। ১নং আসামি মুদির দোকানি আব্দু রশিদ (৫৫) এবং তার ছেলে ফরিদুল হককে করা হয়েছে ৫নং আসামি। ১৪নং আসামি করা হয়েছে তার ছেলে প্রবাসী জিয়াউল হক এবং ৪নং আসামি মুজিবুল হক একজন ছাত্র। ১৬নং আসামি ইমাম শরিফ একজন কৃষক, ১৫নং আসামি আক্তার কামাল একজন ছাত্র। ৯নং আসামি নুরুল আবছার একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের আসামি করেছে; কিন্তু দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে জাবেদ ইকবালের নেতৃত্বে অবৈধ মাটি ও বালি উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।

জাবেদ ইকবাল জেলা যুবদল নেতা হওয়ার সুবাদে নিজেকে কখনো সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল এবং কখনো সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের অনুসারী দাবি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এসব অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগেও যুবদলের এ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

ইউনির্ভাসেল প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, গেল ১০-১২ বছর আমি ও আমার ভাই ইসমাইল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমি কক্সবাজার শহরে থাকি কয়েক বছর ধরে। অথচ বালি জব্দের মামলায় আমরা দুই ভাইকে আসামি করা হয়েছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে জাবেদ ইকবাল আমাদের আসামি করেছে।

মামলার ১নং আসামি রশিদ আহমদ বলেন, আমি যদি কোনো অপরাধ করতে যাই তবে কি আমার তিন সন্তানকে নিয়ে যাব? মামলায় আমাকে ও আমার প্রবাসী ছেলে এবং ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। আমরা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে প্রকৃত দোষী এবং পাশাপাশি যুবদল নেতা জাবেদ ইকবালের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, আমার জীবনে আমি কখনো পাহাড় কাটা কিংবা বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না এবং নেই। জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে জাবেদ ইকবাল আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছে। মামলায় যাকে মূল সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়েছে তিনিও আমার নাম দেননি বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে মামলার মূল সাক্ষী গ্রামপুলিশ কাদের হোসেন বলেন, অভিযানে এসিল্যান্ড ফোনে জাবেদের সঙ্গে কথা বলে নামগুলো দিয়েছেন। আমি কারো নাম দেইনি। এমনকি আমাকে সাক্ষী হিসেবে দেখালেও মামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক আওসাফুল ইসলাম বলেন, মামলার সাক্ষী ও রামুর এসিল্যান্ডের দেওয়া তালিকা মতে আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

কিন্তু মামলায় উল্লেখ থাকা গ্রামপুলিশ আবদুল কাদেরের সঙ্গে আসামির তালিকা নিয়ে কারো কথা হয়নি বা তিনি আসামিদের অনেককে চিনেন না দাবি করার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, গ্রামপুলিশ কাদের কেন এমন বলছেন জেনে দেখব বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বলেন, অভিযানে আমরা ড্রেজার মেশিন, পাম্প, ট্রলিগাড়ি, ৩০০ ফুট পাইপসহ যা পেয়েছি তা জব্দ তালিকা করে সংরক্ষণ করা আছে। সাক্ষী ও অন্য স্থান হতে যাদের নাম এসেছে তাদের যাচাই করে আসামি করার জন্য পরিবেশের কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া ছিল। উনি তদন্ত না করে আসামি করলে সেটার দায় বাদীর। কারো কাছে প্রভাবিত হয়ে মামলার আসামি করার অভিযোগ সঠিক নয়। মামলার আসামি সংক্রান্ত সব দায় বাদী ও সাক্ষীদের।

অভিযোগের বিষয় জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল বলেন, অভিযোগকারীরা পরাজিত শক্তি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী। তারা ১৫ বছর ধরে আমি এবং আমার পরিবারকে অত্যাচার করেছে, ভিটেমাটি দখল করেছে। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এখন আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, তারা পানেরছড়া এলাকায় পাহাড় সংলগ্ন খালে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলে ব্যবসা করে, সেটা সবাই জানে। এখন পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, সেটার দায় কি আমার? আমি তো পরিবেশ অধিদপ্তর বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ না যে, আমার কথায় মামলা হবে? সত্য হচ্ছে এটা যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মারা বিভিন্ন রূপে মানুষের অনুকম্পা বা দয়া পাওয়ার চেষ্টা করছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম