পূজামণ্ডপের চাল কালোবাজারে বিক্রি, তদারকি নেই কর্তৃপক্ষের
মো. নুরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৪ পিএম
দুর্গাপূজা উপলক্ষে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তদের আপ্যায়নের জন্য সরকারি বরাদ্দের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতারা যৌথ সিন্ডিকেট করে মন্দির কমিটির কাছ থেকে নামমাত্র দাম দিয়ে এসব চাল কিনে নিচ্ছেন। আর এই কালোবাজারির চক্রে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে।
প্রতিবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে চাল বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বরাদ্দকৃত ওই সরকারি চাল দিয়ে পূজা মণ্ডপে আপ্যায়ন করার কথা থাকলেও মন্দির কমিটি ওই চাল নামমাত্র দামে কালোবাজারে বিক্রি করেছে।
সব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসব বরাদ্দের চাল পূজামণ্ডপে পৌঁছায় কিনা- এ বিষয়ে তদারকি করার কথা থাকলেও বাস্তবে কোনো তদারকি হচ্ছে না। ডেলিভারি অর্ডার দেওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন শেষ। বিভিন্ন অনিয়মে পূজামণ্ডপের চাল কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার ৫১৩টি পূজা মণ্ডপের জন্য এ বছর ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত চাল সরকারিভাবে বাজারমূল্য নির্ধারণ করা ৫১ হাজার ৮০০ টাকা মেট্রিক টন। এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি পূজামণ্ডপে বরাদ্দ দেওয়া ৫০০ কেজি চালের মূল্য ২৫ হাজার ৯০০ টাকা। অথচ বরাদ্দের ৫০০ কেজি চাল কালোবাজারে ১৬ হাজার টাকা অর্থাৎ ৩২ টাকা দরে কিনে নিচ্ছে কালোবাজারিরা। এতে মন্দির কমিটি ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য কালোবাজারে ছোঁয়ায় নস্যাৎ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে মন্দির কমিটির কাছ ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) কিনে নিচ্ছে লিটন, জাহাঙ্গীর, আওয়াল নামের ব্যবসায়ীরা।
উচুটিয়া লৌহকারপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপের সভাপতি নিরঞ্জন চন্দ্র কর্মকার বলেন, সোমবার সকালেই বেউথা খাদ্যগুদামের সামনে থেকেই ১৬ হাজার টাকায় চাল বিক্রি করেছি। ওইগুলো মোটা চাল খাওয়া যায় না তাই বিক্রি করেছি। শুধু আমিই না সবাই বিক্রি করছে।
এত কম দামে বিক্রি করলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ১৭ হাজার টাকা দাবি করেছিলাম তাও দেয়নি। ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
পূর্ব দাশরা ঋষিপাড়া সম্প্রদায় সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি ভাষান মাতবর বলেন, আমরা ১৬ হাজার টাকায় চাল বিক্রি করেছি।
ব্যবসায়ী লিটন বলেন, আমি ন্যায্য দাম দিয়েই কিছু চাল কিনেছি। কাউকে জোর কিংবা হুমকি দিয়ে না। আমি ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে চাল কিনেছেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস সরকার বলেন, আমার এখান থেকে চাল কেনাবেচার সুযোগ নেই। যার নাম ডিও তাকেই চাল দেওয়া হবে। তিনি বাহিরে গিয়ে ওই চাল কি করবেন আমার জানার বিষয় না।
মানিকগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি তার ছেলে রিসিভ করেন।