রামুর ঘরে ঘরে সুপেয় পানি পৌঁছে দিচ্ছে ডেনমার্ক

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৩ পিএম

কক্সবাজারের রামুর চাকমারকুল ইউনিয়নের পূর্ব শাহ আহমদেরপাড়া একটি জনবহুল গ্রাম। গত এক দশক ধরে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে এ গ্রামের হাজারও পরিবার। গ্রামটিতে সেচ প্রকল্পের জন্য শুষ্ক মৌসুমে অগভীর নলকূপ থেকে পানি পাওয়া যায় না। বর্ষায় পানি পাওয়া গেলেও তা ময়লার কারণে ব্যবহার অযোগ্য থাকে। ফলে গ্রামের হাজারও পরিবারকে খাবারের পানির জন্য যেতে হয় প্রায় কিলোমিটার দূরে, যা দৈনন্দিন জীবনে চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার এই পানি সংকট সমাধানে এগিয়ে এসেছে ডেনমার্ক সরকার। স্থানীয় সরকারের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘হাইসাওয়া’ নামের একটি সংস্থা ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক সহায়তায় এলাকার প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। গভীর নলকূপে পাইপলাইন স্থাপন করে প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সুপেয় পানি।
সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পরিচালিত গভীর নলকূপ থেকে পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে ১০০টি ঘরে সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫৫টি পরিবার এ সুবিধা পাচ্ছে এবং আগামী দিনে ধীরে ধীরে আরও পরিবার এতে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য মরিয়ম বেগম বলেন, এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র এবং দীর্ঘদিন ধরে পানি সংকটের কারণে তারা চরম সমস্যায় পড়েছেন। তবে ডেনমার্কের ‘হাইসাওয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে এখন তারা নিরাপদ পানি সরবরাহের সুবিধা পাচ্ছেন, যা তাদের জীবনযাত্রাকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।
প্রকল্পের উপকারভোগী হুমায়ুন আজাদ জানান, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ৭-৮শ ফুট নিচে গিয়েও খাবার উপযোগী পানি মিলত না; কিন্তু এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিরাপদ পানি পাচ্ছি। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দ আহমদ বলেন, আগে খাবার পানির জন্য এক কিলোমিটার দূরে যেতে হতো, কিন্তু এখন ঘরের দরজায় পানির সুবিধা পাচ্ছি। এটি আমাদের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
এদিকে এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগও চলমান রয়েছে। ‘হাইসাওয়া’ শুধু পানি সরবরাহে নয়, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, নিরাপদ পানির কারণে পরিবারের সদস্যরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমেছে। এই প্রকল্প আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তার ক্ষতি হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন; কিন্তু অনেকেই এ প্রকল্পের সুফল পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছেন।
হাইসাওয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ওসমান বলেন, কক্সবাজারে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। আমাদের কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পেরেছি।
স্থানীয় উপকারভোগী ঝিনুক বলেন, আগে বিলের পুকুরের পানি দিয়ে কাজ করতাম, যা নিরাপদ ছিল না। এখন আমি নিরাপদ পানি পাচ্ছি, যা আমার পরিবারকে অনেক সাহায্য করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক সমস্যার মুখোমুখি। এখানে সুপেয় পানির সংকট এবং দূষিত পানি পান করার ফলে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। তবে ‘হাইসাওয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে নিরাপদ পানির সংকট তীব্র। এ সংকট দূর করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। রামুতেও এলজিইডির মাধ্যমে হাইসাওয়া সংস্থাটির কাজ আমাদের জন্য সহায়ক।