Logo
Logo
×

সারাদেশ

এক ভোটে পরাজয় দেখানো প্রার্থী ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী!

Icon

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৯ পিএম

এক ভোটে পরাজয় দেখানো প্রার্থী ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী!

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় ইউপি সদস্য নুরুল হাসান। ভোট গণনায় কারচুপি করে, তাকে এক ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়।

এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনকে। পরাজয় দেখানো প্রার্থী ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানিয়ে হবিগঞ্জ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন।

আদালত দীর্ঘ দেড় বছর নানারকম তদন্ত যাচাই-বাছাই শেষে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার আদেশ দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পালের আদালত কক্ষে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়।

ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, এক ভোটে পরাজিত প্রার্থী নুরুল হাসান ৫৩৩ কোটি বিজয়ী। দীর্ঘ সময়ের শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, দলিল দস্তাবেসের যাচাই বাছাইয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের নানা অসঙ্গতি ও ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল এক ভোটে বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার  ও কারচুপির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফকর উদ্দিনকে সন্দেহাতীতভাবে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর আদেশের কপি প্রেরণ করেন। 

নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল বিস্ময় প্রকাশ করে রায়ে উল্লেখ করেন, ৫৩৩ ভোট বেশি পাওয়া প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজিত দেখানো হয়েছে। ভোট গণনায় মানবিক ভুল থাকা স্বাভাবিক হলেও, এত বিশাল ভোটের ব্যবধান কোনো স্বাভাবিক নয়।

আদালত তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও পুলিং অফিসার ফখরুদ্দিন মামুন, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে তার নিকটাত্মীয় ইসলাম উদ্দিনের পক্ষে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত করেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেন।

ইসলাম উদ্দিন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন। আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ মিথিলা ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পূর্বিতা চাকমা গত ২ জুলাই আপিলের রায়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেওয়া ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের রায় বহাল রাখেন। এ রায়ের বিপক্ষেও দুর্নীতিবাজ চক্র হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা জারি করলে নুরুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।

রোববার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় হবহু বহাল রাখেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চূড়ান্তভাবে নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মতিউর রহমান নির্বাচনি ডাকাতিতে জড়িত সহকারী শিক্ষক ফখরুদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, পুলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনো কেন ক্রিমিনাল মামলা হয়নি তা জানতে চান।

বিজয়ী ঘোষিত নুরুল হাসানের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ইসলাম উদ্দিন ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল ও ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হবে বলে আদালতকে জানান।

এ প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের আইন-কানুন ও নির্বাচনি ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে দুর্নীতিবাজ চক্র ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজয় দেখিয়েছেন। এটি আইন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের প্রতি চরম ধৃষ্টতা। এরা একদিকে যেমন আমার মক্কেলকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, অন্যদিকে রাষ্ট্রের আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন। দুর্নীতি ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ইসলাম উদ্দিন রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম