সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেছেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। ধর্মীয় বিভেদ, বর্ণ ও শ্রেণিবৈষম্য ভুলে সবাই মিলে মিশে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে আমাদের। তবেই শহিদ ছাত্র-জনতার আত্মা শান্তি পাবে। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের গণতন্ত্র, শান্তির ও উন্নয়নের মডেল। 

শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বর্ধনপাড়ায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

এ সময় দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলার ২২১টি পূজামণ্ডপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে প্রতিটি মন্দিরের জন্য তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান দেন। 

জাতীয় পার্টির পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম পূজারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে দলমত ভেদাভেদ না রেখে এ উৎসব পালন করুন। হিন্দু সম্প্রদায়ের এ উৎসবকে নির্বিঘ্নে পালন করতে সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক শান্তির নিবাস দোহার-নবাবগঞ্জ। এটাকে অক্ষুন্ন রাখতে আমাদের সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। 

এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির নেতাদেরকে দুর্গাপূজা পালনে নিজ নিজ ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কর্মীদের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সবাই এ মাটির সন্তান। ধর্ম যার যার উৎসব সবার—এ কথাটি আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে দুর্গাপূজায় নবাবগঞ্জ দোহারের প্রতিটি দুর্গামন্দিরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পাহারা দেবে। যাতে কোনো দেশবিরোধী চক্র কোনো অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে না পারে। যাতে আমাদের বদনাম না হয়। 

‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মর্যাদা ও সুনাম রক্ষায় জাতীয় পার্টি ছাত্র-জনতার পাশে থেকে দেশের জন্য কাজ করে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে আমি আপনাদের এমপি হিসাবে দোহার-নবাবগঞ্জের বিদ্যুৎ, সড়ক, সেতু, স্কুল-কলেজের সরকারিকরণসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। কিন্তু আমার এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে আমাকে এমপি নির্বাচিত হতে দেয়নি। ফলে বিগত ৫ থেকে ৭ বছর কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি এখানে। উন্নয়ন হয়েছিল সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীদের। 

সালমা ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন সালমান এফ রহমান ও তার দোসররা জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তারা ব্যাংকসহ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। শেয়ারবাজার লুণ্ঠন করে ছাত্র-জনতার স্বপ্নকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। এসব গণবিরোধীদের বর্জন করতে হবে। কোনোভাবেই ব্যাংক লুটকারীদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না এই দেশে। যারা গরিবের রক্ত চুষে নিয়ে দেশের বাইরে অর্থ-পাচার করে, তাদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। 

এ সময় দোহার-নবাবগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে সালমা ইসলাম বলেন, আপনাদের প্রিয় মানুষ যমুনা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আপনাদের মাঝে নেই। তার রেখে যাওয়া আদর্শকে ধারণ করে আমি ও আমার ছেলেমেয়েরা আপনাদের পাশে ছিলাম। এখনো আছি। কোনো অন্যায়ের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মাথানত করেননি। তার দেখানো পথ ধরে এগিয়ে যেতে চাই আপনাদের সঙ্গে নিয়ে। আপনাদের সেবা করতে, আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই। 

তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে আমি আপনাদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধের ব্যবস্থা করেছি। ইছামতি নদী, কালীগঙ্গা নদীতে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করে দিয়েছি। আগামী দিনেও আপনাদের পাশে থেকে আপনাদের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। 

এ সময় তিনি সবাইকে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানান।

এতে উপস্থিত ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জুয়েল আহমেদ, সহসভাপতি আসাদুর রহমান রানা, রিপন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, উপদেষ্টা টিপু মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, জাতীয় পার্টি নেতা মো. ওয়াসিম, আক্তার মেম্বার, নকুল কুমার সরকার, মো. সাহেদ ভূইয়া, আব্দুল আজিজ, গ্যাবরিয়েল গমেজ, চুন্নু, নারায়ন, কেরামত মাদবর, আরশেদ আলী, মহিলা পার্টির নেত্রী নবনিতা আহমেদ রিনা, নবাবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতা শ্রী কৃষ্ণ সাহা, শুভ্র তালুকদার, বিনয় কুমার সরকার, দোহার উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিপন রাজবংশী, দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার বেপারী, সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টি নেতা ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদসহ দুই উপজেলার জাতীয় পার্টি, ছাত্র সমাজ, মহিলা পার্টি, কৃষক পার্টি, যুব সংহতি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ও জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা।