শেরপুরে ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শহিদ সবুজের পরিবার
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের সময় গত ৪ আগস্ট শেরপুর শহরে গুলিতে নিহত হন সবুজ মিয়া (১৮)। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার। সংসারের একমাত্র ভরসা উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে শহিদ সবুজ মিয়ার পরিবার আজ দিশেহারা। সে কলেজে লেখাপড়ার পাাশাপাশি স্থানীয় একটি ওষুধের ফার্মেসিতে কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের খরচ চালাতো।
গত ৪ আগস্ট বিকেল পৌনে ৪ টার দিকে শেরপুর শহরের খরড়মপুর মহল্লার নতুন আইডিয়াল স্কুলে সামনের পাকা রাস্তার ওপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের মিছিলে গুলিতে সবুজ মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
নিহত সবুজ শ্রীবরদী সরকারি কলেজের ছাত্র ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী, শ্রীবরদী উপজেলা রূপারপাড়া গ্রামের আজাহার আলী ও সমেজা খাতুন দম্পতির ছেলে।
নিহত সবুজের বাবা গত ৭ বছর ধরে প্যারালাইসিসের রোগী কথা বলতে গেলে কথা জড়িয়ে আসে। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। সবুজের ১২ বছরের ছোট ভাই কাউসার ও ১০ বছরের ছোট বোন আয়শা স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কোনো জায়গা জমি নাই। একটি দোচালা টিনের ঘরে শহিদ সবুজের পরিবার বসবাস করে।
নিহত সবুজকে শ্রীবরদী উপজেলা রূপারপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ির আঙিনায় বাঁশঝাড়ের নিচে কবর দেওয়া হয়েছে। এই কবরে চারপাশে দেওয়া হয়েছে বাঁশের বেড়া। সেই কবরের বেড়ায় সাটানো রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সকাল-দুপুর ও বিকেলে সেই কবরের পাশে গিয়ে শহিদ সবুজের বাবা-মা, ভাই-বোনেরা কান্নাকাটি করেন। ইতিমধ্যেই শহিদ সবুজের কবর জিয়ারত করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতারা এবং শ্রীবরদী সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া জমায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও শহিদ সবুজের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সবুজের মা সমেজা খাতুন বলেন, আমার ছেলেটাই একমাত্র ভরসা ছিল আমাদের সংসারের। ওর বাবা প্যারালাইসিসের রোগী। ছেলেটা এসএসসি পাশ করার পর থেকে একটি ওষুধের দোকানে কাজ করে কিছু টাকা রোজগার করতো। সেই টাকাতেই সংসার ও তার লেখাপড়ার খরচ চলাতো। এখন আমায় চালানোর মতো কেউ নাই। আমি এখন সর্বহারা। সরকার যদি আমার পাশে থাকে। আমারে দেখে তা হলে আমি আমার দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালভাবে থাকতে পারমু। এ পর্যন্ত স্যারেরা ও ছাত্ররা কিছু দিছিল এ গুলো নিয়েই বাজার-সদাই কইরা খাইতাছি। কিছু ঋণ ছিল তা শোধ করছি।
তিনি বলেন, আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিছে, সারা বাংলাদেশের মানুষ যেন ভাল থাকে। দেশে যেন কোন সন্ত্রাসী থাকে না। দেশের মানুষ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। আমার ছেলেরে যারা হত্যা করছে তাদের বিচার আমি অতি তাড়াতাড়ি চাই।
সবুজের বাবা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত আজাহার আলী অস্পস্ট ভাষায় বলেন, আমার ছেলে গুলি খায়ছে। গুলি খাইয়া মরছে।
প্রতিবেশি আকাশ ইসলাম বলেন, শহিদ সবুজের পরিবারকে খাওয়ানো-পরানোর জন্য কেউ নাই। কাজ করার মতো একটাই ছেলে ছিল কাজ করতো এবং পড়তো। এখন সরকার যদি এই পরিবারটিকে একটা ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে পরিবারটি বেঁচে যাবে।