ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামিকে ছেড়ে দিল পুলিশ, ওসিসহ তিনজন প্রত্যাহার

আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি রোমান মিয়াকে যৌথবাহিনী আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তাকে ছেড়ে দেওয়ার এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, বাদি ভুলক্রমে তাকে আসামি করেছে বলে জানানোর কারণে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আশুগঞ্জ থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগে বুধবার রাতে আশুগঞ্জ বাজারের ভাড়া বাসা থেকে রোমান মিয়াকে আটক করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। রোমান মিয়া আশুগঞ্জ থানায় ২০ আগস্ট হওয়া একটি মামলায় এজাহার নামীয় ৬ নং আসামি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশুগঞ্জ বাজারের ভাড়া বাসা থেকে যৌথবাহিনীর একটি দল রোমান মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। রাত থেকেই তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ও দূর্গাপুর ইউনিয়নের লোকজন থানায় চাপ দিতে থাকেন।
বৃহস্পতিবার সকালে থানার সামনে অনেকেই অবস্থান নেন তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.ইকবাল এবং এসআই দীপক চৌধুরী ও এসআই প্রদ্দুধ কুমার ঘোষকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার নিশ্চিত করেছেন।
তবে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.ইকবাল এবং এসআই দীপক চৌধুরী ও এসআই প্রদ্দুধ কুমার ঘোষকে কেন সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসনিক কারণে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একটি সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা রোমানকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.ইকবাল এবং এসআই দীপক চৌধুরী ও এসআই প্রদ্দুধ কুমার ঘোষকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রোমান মিয়াসহ আরও অনেকেই তাদের হাতে থাকা ককটেল বিস্ফোরণ করে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি করেন। একপর্যায়ে রোমান মিয়াসহ আরও অনেকেই তাদের কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে ছাত্রদের উপর গুলি ছোড়েন। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আসামিরা তাদের কাছে থাকা পেট্রোল দিয়ে অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় মো. রমজান মিয়া বাদি হয়ে আশুগঞ্জ থানায় ২০ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় রোমান মিয়া ৬ নং আসামি। মামলায় রোমানের আপন ছোট ভাই দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেল মিয়া ৫ নং আসামি। এছাড়াও এই মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল আশুগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি মঈন উদ্দিন মঈনকসহ ৪৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদি রমজান মিয়া প্রথমে বলেন, থানা থেকে কল করা হলে তিনি বিকালে কথা বলবেন বলে জানান। পরে আবার বলেন যে, রোমান মিয়াকে ভুলক্রমে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা বিএনপির দুইটা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। তিনি সরাসরি দেখা করে কথা বলবেন বলে জানান।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, রোমান মিয়া একটি মামলার ৬ নং আসামি। রাতে তাকে আটক করা হলেও সকালে বাদি রোমান মিয়ার নাম ভুলক্রমে এজাহারে লেখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বাদি বিষয়টি আদালতেও জানিয়েছেন। বাদীর বক্তব্যের কারণেই রোমান মিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।