মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ধূমপানের ভিডিও ভাইরাল
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম
বড়লেখা উপজেলা সদরের মোহাম্মদিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের ধূমপানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এমন অধঃপতনে শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
বুধবার ঘটনাটি নজরে এলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্লাসে বেঞ্চের উপর বসে-দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছেন কয়েকজন ছাত্র। ছাত্রদের সিগারেট টানার দৃশ্যটি ধারণ করছিলেন ক্লাসের অন্য এক ছাত্র। তখন ক্যামেরার দিকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক ছাত্র বিভিন্ন অশালীন মন্তব্য করছেন।
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে বুধবার দুপুরে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মাদ্রাসার সীমানা ঢেউটিনের প্রাচীর ও মসজিদের জানালার থাই গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। দুইপক্ষের চরম উত্তেজনার খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।
জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের সময় বড়লেখা মুহাম্মদিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র ক্লাসে বসে সিগারেট খান। এ সময় ক্লাসের অন্য এক ছাত্র তাদের সিগারেট খাওয়ার ভিডিওটি ধারণ করেন। পরে সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে ক্লাসে ছাত্রদের সিগারেট খাওয়ার বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে বুধবার মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে শিক্ষকদের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে অষ্টম শ্রেণির অপর এক ছাত্রকে মারধরের বিষয়ে জানতে বুধবার দুপুরে উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল কাদির পলাশ, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের কাছে যান। সেখানে মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় মাদ্রাসার টিনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। ঢিলে মসজিদের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে যায়। এ সময় উভয়পক্ষের কয়েকজন ৫ জন আহত হন।
ছাত্র সংসদের ভিপি শিবির নেতা আব্দুর রহমান এবাদ জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা ডেকে অভিযুক্ত ছাত্রদের সাময়িক বহিষ্কার করেন। পরবর্তীতে কয়েকজন ছাত্রদল নেতাসহ বহিরাগতরা মাদ্রাসায় এসে শিক্ষকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। আমরা প্রতিবাদ করায় তারা অসদাচরণ করলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম জানান, অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের বিষয়ে জানতে যুবদল নেতা আব্দুল কাদির পলাশসহ আমরা তিন-চারজন মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। আমাদের কাছে অনেক ছাত্র বলেছে যে, মাদ্রাসায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক ছাত্রকে শিবিরের ফরম পূরণ করানো হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী ফরমপুরণ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। এসময় শিবিরের কয়েকজন এসে আমাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছে। তারা আমাদের একটি কক্ষে আটকে রাখে, হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে তাদের প্রতিহত করেছি। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তারা ফেসবুকে সিগারেট খাওয়ার ঘটনায় বহিষ্কৃতদের ছাত্রদলের বলে অপপ্রচার করছে।
যুবদল নেতা আব্দুল কাদির পলাশ বলেন, মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এনামুলকে শিবিরে যোগদান না করায় মারধর করা হয়েছে। তাকে মারধর করা শুনে মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। তখন শিবিরের কয়েকজন আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, কেন এসেছি জানতে চায়। আমাদের বেরিয়ে যেতে বলে। পরে অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমাদের কয়েকজন আহত হন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আলিম উদ্দিন জানান, মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র ক্লাসে সিগারেট খেয়েছে। যার কারণে জরুরি সভা ডেকে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। আমি জরুরি কাজে মৌলভীবাজারে গিয়েছিলাম। এসে শুনি, বহিরাগত কয়েকজন মাদ্রাসায় এসে হামলা করেছে, সীমানা প্রাচীর ও মসজিদের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেছে। সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বড়লেখা থানার ওসি আবদুল কাইয়ূম বলেন, মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।