সীমান্তে সক্রিয় মানবপাচার ও দালাল চক্র
দিনাজপুর ও বিরল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে গুজব রটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিনাজপুরের বিভিন্ন সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে মানবপাচার ও দালাল চক্র।
ভারতে নির্বিঘ্নে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে নিরীহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন-দিনাজপুর সেক্টরের অধীন ২০৯ কিলোমিটার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সক্রিয় রয়েছেন তারা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানো ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দালাল চক্র ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতিজন মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছে ২০ হাজার টাকা। আর নগদ টাকা বা সম্পদ নিয়ে গেলে সেই টাকা বা সম্পদের ১০ শতাংশ আদায় করে নিচ্ছে দালাল চক্র। প্রথমে তারা সীমান্তের বিভিন্ন বাড়িতে তাদের জড়ো করে রাখছে এবং সুযোগ বুঝে ভারতে পাচারের অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। অনেককে সীমান্তে এনে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে ছেড়েও চলে গেছে দালাল চক্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৬ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কিশোরীগঞ্জ সীমান্তে নিয়ে আসে দালাল চক্র। এরপর তাদের কিশোরীগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখায় রেখে পালিয়ে যায় পাচার ও দালাল চক্রের সদস্যরা।
পরে তাদের সীমান্ত থেকে বিজিবি আটক করে। অনুরূপভাবে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিরল উপজেলার রামচন্দ্রপুর সীমান্তের একটি বাড়িতে ৫ জনকে জড়ো করে রাখে পাচার ও দালাল চক্র। পরে বিজিবি তাদের আটক করে।
এছাড়াও সম্প্রতি বিরল উপজেলার বৈরাগীপাড়া সীমান্তে ৩জনকে ভারতে পাঠানো কথা বলে নিয়ে আসে দালাল চক্র। সামান্তে এনে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় ওই চক্রটি। পরে বিজিবি তাদের আটক করে। এভাবে বিভিন্ন সীমান্তে মানবপাচার ও দালাল চক্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে বিপদে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আরিফুল হক বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন সম্প্রদায়ের বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে মিথ্যা গুজব রটিয়ে আতঙ্কিত করে তোলে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে বিপদে ফেলছে। এ ব্যাপারে গুজবে কান না দিয়ে সকলকে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা না করার আহবান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, দিনাজপুর সেক্টরের অধীনে বাংলাদেশ-ভারতের মোট ২০৯ কিলোমিটার সীমান্ত। এই সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সবসময়ই সতর্ক রয়েছে বিজিবি সদস্যরা। গত ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সীমান্ত থেকে ১৭০ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।