ফাঁড়ির দেয়াল ভেঙে রাস্তা নির্মাণে বিএনপি নেতাদের দৌড়ঝাঁপ
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির প্রাচীর ভেঙে আবাসন প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী বিএনপি নেতার শেল্টারে একটি সিন্ডিকেট এ তৎপরতা চালাচ্ছে।
এরই মাঝে তারা পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন দিয়েছে। যেকোনো সময় নিজ উদ্যোগে পুলিশ ফাঁড়ির প্রাচীর ভেঙে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ওই পুলিশ ফাঁড়িটি অরক্ষিত হয়ে পড়বে।
এদিকে পুলিশ ফাঁড়ির প্রাচীর ভাঙা নিয়ে এলাকায় রীতিমতো সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আবাসন প্রকল্পের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অরক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কুমিল্লার প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী গৌরীপুর বাজার এবং আশপাশের আধুনিক সব আবাসিক এলাকাসহ ৬টি ইউনিয়নের নিরাপত্তায় গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। ফাঁড়ির অবকাঠামো নির্মাণে বাজারের ব্যবসায়ীদের অনেক অবদান রয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়িটি ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়। ফাঁড়ির সব মালামাল এবং অস্ত্রশস্ত্র লুট করা হয়।
পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের বাজারের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগেই ফাঁড়িটির পুনর্নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি ওই পুলিশ ফাঁড়ির প্রাচীর ভেঙে পশ্চিম পাশের আবাসন প্রকল্পের লোকজনের যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এবং গৌরীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসেম, তিতাস উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ওসমান গনি এবং এলাকার হাজী আনোয়ার হোসেনের সহযোগিতায় সিন্ডিকেট সদস্যরা ওই রাস্তা নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বেশ কয়েক বছর যাবত পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিম পাশের আবাসন প্রকল্পের জন্য রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট; কিন্তু কোনোভাবেই তারা সুযোগ পায়নি। এখন পুলিশের দুর্বলতার সুযোগে তারা কাজটি সম্পাদন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ওই ব্যবসায়ীরা জানান, ফাঁড়ির ভেতর দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করতে পারলে পশ্চিম পাশের আবাসন প্রকল্পের জমি, প্লট এবং ফ্ল্যাট মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তাই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এলাকার প্রভাবশালীদের ব্যবহার করে ওই রাস্তা নির্মাণের পাঁয়তারা করছে।
তবে বিএনপি নেতা আবুল হাসেম চেয়ারম্যান বলেন, আসলে ফাঁড়ির পশ্চিম পাশের অনেক পরিবার চলাচলের রাস্তা পাচ্ছে না। তাই তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। অনুমতি পেলে রাস্তা করবে। না পেলে করবে না। এসবের সঙ্গে আমার কিংবা বিএনপি নেতাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এসব বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কথা বলবে। আর ফাঁড়ির মাঝখান দিয়ে রাস্তা নেওয়া হলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, ফাঁড়ির মাঝখান দিয়ে আবাসন প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে একটা গ্রুপ এসে আবেদন করেছেন। তারা এখানে এসে ঘোরাফেরা করছিল। তবে এ বিষয়ে অনুমতি পাবে বলে মনে হয় না।