গোলন্দাজের আশীর্বাদে শতকোটি টাকার মালিক ইউপি চেয়ারম্যান কাশেম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২২ পিএম
গফরগাঁওয়ের সাবেক এমপি ফাহমী গোলন্দাজের আশির্বাদে ১০ বছরে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ওরফে খায়ালা কাশেম (অপসারিত)। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
কাশেম উপজেলার বারবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে গত ১০ বছরে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ওরফে খায়ালা কাশেম আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি। পলাতক থাকায় স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে অপসারণ করে ওই ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ করে উপজেলা প্রশাসন।
ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে পরিষদের সদস্যসহ ইউনিয়নবাসী অবগত। চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা শুধু ইউনিয়নবাসীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, উপজেলার সর্বস্তরের জনতার মুখে মুখে এখন তার নাম। চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ছিলেন গফরগাঁও আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল তথা গোলন্দাজ পরিবারের একান্ত বিশ্বস্ত লোক। গফরগাঁওয়ের আলোচিত সাবেক সংসদ-সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের হাতের ছোঁয়ায় নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটবিহীন নির্বাচনে একাধারে দুবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গত ১০ বছরে টাকা কামিয়েছেন তিনি দুহাতে। চলাফেরা করতেন নতুন দামি দামি গাড়ি নিয়ে। চেয়ারম্যান আবুল কাশেম যেসব গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াতেন সেগুলো হলো-নিশান এক্সট্রাম, ল্যান্ড ক্রুজার ও প্রিমিও। চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। ছেলে ইপেলের নামে নিজ গ্রাম চারিপাড়ায় গড়েছেন ইটভাটা, মাছের খামার। পার্শ্ববর্তী ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ছেলের শ্বশুরবাড়ি এলাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়ে গড়েছেন অটো ব্রিকফিল্ড। ঢাকা ও ময়মনসিংহে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট বাড়ি। শুধু টাকা কামানোর ক্ষেত্রে নয়, রাজনীতির মাঠেও ছিলেন তিনি একজন পাকাপোক্ত খেলোয়াড়। পৌরসভার মেয়র এসএম ইকবাল হোসেন সুমনকে রাজনৈতিক কূটকৌশলে ফেলে গফরগাঁও ছাড়া করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, আবুল কাশেমের দাপটে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ গফরগাঁওয়ের ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সব চেয়ারম্যান থাকতেন ভয়ে। কখন জানি তাদের বিরুদ্ধে এমপির কাছে নালিশ করে বসেন তিনি। গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের পেছনে ফেলে সাবেক সংসদ-সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বিশ্বস্ততা অর্জন করে সবকিছুই দেখভাল করতেন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। একাধারে দুবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটিও বাগিয়ে নেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সব কিছুই চলত তার ইশারায়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং কালীবানার নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি করতেন চেয়ারম্যান কাশেম। এছাড়া ঠিকাদারি ব্যবসার সেভেন স্টার বাহিনী ও পরিবহণ সেক্টর সবই ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।
উপজেলা পরিষদের এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, ‘গত ১০ বছরে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরকারের দেওয়া উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অর্থ লুটপাট করেছেন নিজের ইচ্ছেমতো। এমপির ভয়ে আমরা তাকে কিছু বলতে পারিনি। তার আমলে ইউনিয়নে টিআর, কাবিখা, জিআর, কাবিটা, ভিজিডি, এডিবি, এলজিএসপি, ননওয়েজ, লজিক, ইজিপিপি, ইউপি ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি, হাটবাজার, ১% খাতের টাকা নিজের খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করেছেন তিনি।’
সরেজমিন কথা হয় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত এক সদস্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের উন্নয়মূলক কাজকর্ম নিয়ে পরিষদের কোনো সদস্যের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে নিজের ইচ্ছামতো সব কিছু করতেন চেয়ারম্যান। তার কথার প্রতিবাদ করলেই আমাদের ওপর দেওয়া হতো নানা হুমকি-ধমকি। তিনি তার নিজ বাড়িতে অফিস খুলে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরিষদের সদস্যদের ভয় দেখিয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়ে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করতেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম (অপসারিত) এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।