শিক্ষার সব স্তরে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বাধ্যতামূলকসহ ৬ দাবি
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামিক স্কলারদের অন্তর্ভুক্তকরণ এবং শিক্ষার সব স্তরে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বাধ্যতামূলকসহ ৬ দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ সোসাইটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘৯৩% মুসলিমের দেশে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক চাই, করতেই হবে’, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ‘সকল পাবলিক, সরকারি বেসরকারি কলেজগুলোতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চাই’, ‘নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চাই’, ‘পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে ২ জন ইসলামিক স্কলার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
৬ দফা দাবিগুলো হলো:
১. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মূল কমিটিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ‘ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিভাগ’ থেকে ইসলাম শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পুস্তক প্রণয়নের জন্য ৪ জন এবং সব স্তরে প্রণীত পুস্তকের শরিয়া বিষয়াদি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ন্যূনতম ২ জন গ্রহণযোগ্য, বিতর্কমুক্ত, নির্ভরযোগ্য ও দক্ষ শিক্ষাবিদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিতর্কিত ও ভ্রান্ত-চিন্তা লালনকারী, ইসলামবিদ্বেষী এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতাদর্শের বহির্ভূত কাউকে এ কমিটিতে রাখা যাবে না।
২. কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রণীত এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ সংশোধিত) প্রবিধান সংশোধন করে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাষক (আরবি, ফিকাহ, কুরআন, হাদিস ও লাইব্রেরিয়ান) এবং সহকারী মৌলভি (আরবি) ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের আবেদন করার সুযোগ পুনর্বহাল করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৩. প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকের সব স্তরে ইসলাম শিক্ষা আবশ্যিকরণ করতে হবে।
৪. সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ফিকাহ, কুরআন, হাদিস ইত্যাদি বিভাগ নিয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বা শরিয়া অনুষদ চালু করতে হবে।
৬. ইসলামিক সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগে ইসলাম শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়কে GED-এর অন্তর্ভুক্তকরণ করতে হবে।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদ উৎখাত করে সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। নৈতিকতা বর্জিত একটা জেনারেশন গড়ার উদ্দেশে গত সরকারের আমলে পাঠ্যবইয়ে এলজিবিটিকিউ ও সমকামিতার মতো নোংরামি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় শিক্ষক সমাজকে অপমান করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা বলতে কিছু নেই। এরপরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে পাঠ্যবই সংস্কারের কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিরা স্থান পায়নি। বাংলার মুসলিম সমাজ শাহবাগী চেতনাকে মেনে নেবে না।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিগত ১৬ বছরে শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা বর্জন করে একটা নাস্তিক্যবাদ শিক্ষাক্রমে পরিণত করা হয়েছে। একটা গোষ্ঠী মুসলিম জাতিকে নৈতিকতা থেকে বহুদূরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের সব বইয়ে থাকা হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদিনদের নিয়ে লেখা প্রবন্ধগুলোর পরিবর্তে এখন যেগুলো যোগ করা হয়েছে তা হতাশাজনক। আজকে ছাত্ররা সোচ্চার হয়েছে। এসবের পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম। এ সময় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি মো. আশারাফুজ্জামান, অধ্যাপক এম আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক একেএম আব্দুল লতিফ, অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।