Logo
Logo
×

সারাদেশ

সুবিদ আলীর আশীর্বাদে মাঝি থেকে শয়ে শয়ে বিঘা জমির মালিক আল আমিন

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম

সুবিদ আলীর আশীর্বাদে মাঝি থেকে শয়ে শয়ে বিঘা জমির মালিক আল আমিন

দাউদকান্দিতে সাবেক এমপি সুবিদ আলী ভূঁইয়ার আশীর্বাদে গডফাদার হয়ে ওঠেন মাঝি আল আমিন। খেয়া ঘাটের মাঝি থেকে যুবলীগ নেতা বালু আল আমিন এখন অঢেল সম্পদের মালিক। 

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে সাবেক এমপি সুবিদ আলী ভূঁইয়ার শেল্টারে মেঘনা-কাঁঠালিয়া নদীর বালু লুট, জমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এ মাঝির এখন দামি গাড়ি, ঢাকায় বাড়ি, দোকান, প্লট, ফ্ল্যাট, এলাকায় ১৩০ বিঘা জমি, নগদ অর্থসহ বিপুল সম্পদ। আল আমিনের আলিশান গাড়ি, বাড়ি দেখলে যে কারোরই চোখ কপালে উঠে যাবে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেঘনা-কাঁঠালিয়া নদীর বালু লুট, অবৈধ মাছের ঘের, খাস জমি দখল, অন্যের জমি দখল, ড্রেজার বাণিজ্য, সালিশ দরবার এবং চাঁদাবাজি করে তিনি অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে নিজ কিশোর গ্যাং নিয়ে হামলা, গুলিবর্ষণসহ মারমুখী অবস্থানে ছিলেন এ গডফাদার। বহু শিক্ষার্থীকে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, দাউদকান্দি উপজেলার গোলাপেরচর গ্রামের হতদরিদ্র মৃত মালু মিয়ার ছেলে আল আমিন। পরিবারের দুমুঠো আহার জোটাতে এক সময় মেঘনা নদীর ঘাটে নৌকার মাঝির কাজ করতেন। অর্থাৎ বৈঠার নৌকায় গোলাপেরচর থেকে দাউদকান্দি বাজারে মানুষ পারাপার করতেন। চালাতেন অন্যের নৌকা। পরে কিছুদিন বালুর ট্রলারেও লেবারের কাজ করেন। মাঝখানে কিছুদিন প্রবাসে থাকলেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নদীর বালু কীভাবে লুট করা যায় এ ধারণা দেওয়ার জন্য স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা তাকে তৎকালীন নির্বাচিত সংসদ-সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়ার কাছে নিয়ে যান। দরিদ্র পরিবারের সন্তান পোষ মানবে মনে করে তাকেই বেছে নেন সংসদ-সদস্য সুবিদ আলী। 

স্থানীয়রা জানান, নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে সংসদ-সদস্যের শেল্টারে মাঝি আল আমিন মেঘনা এবং কাঁঠালিয়া নদীর মাটি এবং বালু উত্তোলন শুরু করেন। নদীর মোহনায় বেশ কয়েকটি বিশাল আকৃতির ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে প্রতিদিন শত শত বাল্কহেড এবং ট্রলার ভরে বালু বিক্রি করতে থাকেন। বালু বিক্রির টাকা রীতিমতো সংসদ-সদস্যের ফান্ডে জমা দিয়ে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন মাঝি আল আমিন। সেই সঙ্গে নিজের ভাগ্যের চাকাও ঘুরতে থাকে। বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার বসিয়ে জোরপূর্বক মেঘনা উপজেলার লুটেরচর, চন্দনপুরসহ আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার কৃষকের ফসলি জমির মাটি লুট করেন। একপর্যায়ে মাঝি থেকে পরিচিতি লাভ করেন ‘বালু আল আমিন’ নামে। দিনে দিনে সংসদ-সদস্যের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব কিশোর গ্যাং বাহিনী। ভাগিয়ে নেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ। ক্ষমতার দাপটে এলাকায় করতে থাকেন জমি দখল, চেঙ্গাকান্দি এলাকায় মেঘনা নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের, খাসের জমি দখল, চাঁদাবাজি, সালিশ দরবারের নামে নানা অপকর্ম করে অল্পদিনেই বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যান আল আমিন। 

এলাকার লোকজন জানান, তার বিশাল অর্থের একমাত্র উৎস সাবেক সংসদ-সদস্যের আশীর্বাদ। মাঝি আল আমিন গোলাপেরচর গ্রামে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দাউদকান্দি বাজারে বেশ কয়েকটি দোকান এবং দামি জায়গার মালিক বনেছেন। বালুর বাল্কহেট, চরের মাটি উত্তোলনের ড্রেজার, মাছের ট্রলার, এলাকায় ১৩০ বিঘা জমি, ঢাকায় একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট এবং বাড়ি রয়েছে তার। চলাফেরা করেন একাধিক দামি গাড়ি দিয়ে। এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাৎ করতে বালু আল আমিন তার লালিত কিশোর গ্যাং নিয়ে প্রতিদিনই হামলা চালাতেন। ছাত্র-জনতাকে গুলি এবং মারধর করে রক্তাক্ত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দাউদকান্দিতে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। সবশেষ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর আত্মগোপনে চলে যান আল আমিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং এলাকার ভুক্তভোগীরা হন্যে হয়ে খুঁজলেও তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারছে না কেউ। 

মেঘনা উপজেলার লুটেরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অদুদ মুন্সি বলেন, সাবেক সংসদ-সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়ার শেল্টারে বালু আল আমিন ইউনিয়নের শত শত কৃষককে নিঃস্ব করে দিয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে মেঘনা এবং কাঁঠালিয়া নদীর মোহনা থেকে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছে। বর্ষা মৌসুমে চরের ফসলি জমির মাটি ও বালু লুট করেছে। ইউনিয়নটাকে সে এক প্রকার ধ্বংস করে দিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফোর লেন প্রকল্পের সব বালু আল আমিন সরবরাহ করেছে। আল্লাহ তার বিচার করুন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত বালু আল আমিন ফোনে তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর আনীত অভিযোগগুলো শুনে ফোন কেটে দেন। পরে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি। 

থানার ওসি জোনায়েদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। বালু আল আমিনের নাম শুনেছি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। আমরা এসব অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম