নেপাল ও বিহারে প্রবল বর্ষণে পদ্মায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
নেপাল ও উত্তর ভারতের বিহারসহ অন্য রাজ্যগুলোতে প্রবল বর্ষণের কারণে ফারাক্কার সব লক গেট যে কোনো সময় খুলে দেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে নেপাল ও ভারতের বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কোশি নদীর ব্যারাজ থেকে রোববার বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়েছে ভারত। রোববার ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
এই কোশি নদীর পানি ফারাক্কার উজানে গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে। এতে ভাটিতে বাংলাদেশের পদ্মায় আকস্মিকভাবে পানিস্তর বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর পদ্মা কূলবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিন ধরে পদ্মার পানি ধীরগতিতে নামছিল; কিন্তু ফের উজানে ব্যাপক বর্ষণ হওয়ায় ফারাক্কার সব লক গেট খুলে দেওয়া হতে পারে যে কোনো সময়- এমন তথ্য পেয়েছে পাউবো। ইতোমধ্যে ফারাক্কা ব্যারেজের ভাটিতে থাকা গঙ্গা-পদ্মার কূলবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদের গ্রামগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন। তবে ফারাক্কার ভাটিতে পদ্মার চরাঞ্চলসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামগুলোতে প্রাথমিক সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চল পাউবো সূত্র আরও বলছে, ফারাক্কা থেকে আকস্মিকভাবে পানি ছাড়া হলে আধা ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পানিস্তর বেড়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এ সময়ে পদ্মার পানি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁকা পয়েন্ট ও রাজশাহীর রামপুর বোয়ালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছিল। তবে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে পদ্মায় পানি কমছিল তবে ধীরগতিতে। শনিবার রাতেও পদ্মায় পানি কিছুটা কমেছে। তবে রোববার দুপুরের পর থেকে পানি কমা বন্ধ রয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চল পাউবো সূত্রে জানা গেছে ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁকা পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ২০ দশমিক ৭৮ মিটার। সন্ধ্যায় পানিস্তর একই ছিল। পদ্মার পাঁকা পয়েন্টে বিপৎসীমা ২২ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। অন্যদিকে রাজশাহীর রামপুর বোয়ালিয়া পয়েন্টে পদ্মায় রোববার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৬২ মিটার। এই পয়েন্টে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী পাঁকা ইউনিয়নের বিশরশিয়া গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম কালু বলেন, ফারাক্কার ভাটিতে সীমান্তের ওপারে নদী তীরবর্তী ভারতের গ্রামগুলিতে মাইকিং করা হচ্ছে ফারাক্কায় পানি ছাড়া হবে বলে। এতে ফারাক্কার নিকটবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলার গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলেছে ওই দেশের স্থানীয় প্রশাসন। আমাদের গ্রামগুলো ফারাক্কার ১৭ কিলোমিটার ভাটিতে। ফলে আমরাও সতর্ক আছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, ফারাক্কার উজানে নেপাল ও বিহারে প্রবল বর্ষণ হয়েছে। এতে ফারাক্কায় পানির চাপ বেড়েছে। ফারাক্কায় জলস্ফিতি ঠেকাতে পানি ছাড়তে পারে দেশটির সেচ দপ্তর এমন তথ্য শোনা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ফারাক্কার অধিকাংশ গেটই এখন খোলা রয়েছে। অতিরিক্ত চাপে পদ্মায় পানি প্রবাহ ও উচ্চতা কিছুটা বাড়লেও তা দুই-তিন দিনের বেশি থাকবে না। কয়েক দিনের মধ্যে পদ্মার পানি আবার কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি। এ নিয়ে ভাটিতে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।