স্কুলের জায়গায় দেয়াল নির্মাণ আ.লীগ নেতার
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের ৯১নং বিবিরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় এ দেয়াল নির্মাণ করা হয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রেজাউল করিম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন। এই আওয়ামী লীগ নেতা ঘারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বাদল মুন্সি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিবিরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে প্রতিবেশী মৃত শাজাহান মুন্সির ছেলে মো. বাদল মুন্সি (সাবেক ঘারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সীমানা প্রাচীর তৈরি করছেন। প্রধান শিক্ষক এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ইটের দেয়াল নির্মাণ কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা তাদের কথায় কর্ণপাত না করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপায়ন্তর না দেখে প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ দেওয়ার পরও তাদের কাজ থেমে থাকেনি। তিনি বিদ্যালয়ের সামনের প্রধান ফটকসহ খেলার মাঠ সম্পূর্ণ আটকিয়ে দেন।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম কুদরত এ খুদা জানান, স্কুলের হেডমাস্টার সাহেব আমাকে বিষয়টি প্রাচীর নির্মাণের পরে অবহিত করেছেন। আমি বিষয়টি অবগত হয়ে দখলকারীদের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।
প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, ৯০ সালে স্কুলটি নির্মিত হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনোদিন কেউ হস্তক্ষেপ করেনি। সুযোগ সন্ধানী এই আওয়ামী লীগ নেতা বাদল মুন্সি। তিনি একেবারেই স্কুল ঘেঁষে সামনের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা সব বন্ধ করে দিয়েছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। আমি দুই-তিন দিন ইউএনও স্যারের কাছে গিয়ে তাকে না পাওয়ার সুযোগে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় বিবিরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুলের সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন মোল্লা জানান, স্কুলটি ১৮ শতাংশ জমির মধ্যে বহু আগে থেকেই এভাবেই ছিল। বছর দশেক আগে পশ্চিম পাশে একতলা একটি স্কুলের ভবন ছিল। তারপর সামনে খেলাধুলার মাঠ রেখে উত্তর পাশে নতুন দুইতলা ভবন করা হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাদল মুন্সি, তার চাচা লায়েক মুন্সির কাছ থেকে স্কুলের পিছন থেকে কিছু অংশ জমি ক্রয় করেন, সেই সূত্রে মালিক। তখন থেকেই বাদল মুন্সি স্কুলের পেছনেই ভোগদখল করে আসছেন; কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই আওয়ামী লীগ নেতা বাদল মুন্সি বিএনপি নেতাদের কাঁধে ভর দিয়ে স্কুলের দেওয়াল ঘেঁষে সামনের খেলার মাঠসহ দখল করেন। সরকারি স্কুলের সামনে দখল করার সাহস কিভাবে পেল আমাদের বোধগম্য নয়। মনে হয় যেন দেশে কোনো সরকারই নেই। যেন মগের মুল্লুক পেয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দ্রুত দখল মুক্ত করার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাদল মুন্সি জানান, যেখানে স্কুল রয়েছে সেখানে স্কুলের সাত শতাংশ জমি পাবে। বাকি জমি আমার নামে। অন্য দাগে স্কুলের ১১ শতাংশ রয়েছে। স্কুল প্রয়োজনে সেখানে যাবে। আমার নামের সব কাগজপত্র প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।
এতকাল দখলে যান নাই কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বাদল মুন্সি জানান, প্রভাবশালী নিরু খলিফার জন্যই বিগত দিনে কাজ করতে পারি নাই। তিনি বাধা হয়ে দাঁড়াতেন। এখন আমার সুযোগ হয়েছে, তাই আমার জায়গায় আমি কাজ করছি। আমাদের গোষ্ঠীর একটি গ্রুপ ভাঁওতাবাজি করে স্কুলের নামে জমি লিখে দেন। এখন আমরা গোষ্ঠীর লোকজন বসে কোন জায়গা থেকে স্কুলকে দেওয়া যাবে, সেই বিষয়টি ফয়সালা করার চেষ্টা করব। তবে স্কুলের সামনের জায়গাটি আমি আমার চাচা লায়েক মুন্সির কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক।